
পারদ একটি তরল ধাতু যা পরিবেশগত এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নির্গত হয়। পারদের কিছু নির্দিষ্ট রূপ বিশেষত মিথাইল মার্কারি মানুষের জন্য বিষাক্ত পদার্থ ,এটি মিনামাটা রোগের প্রধান কারণ । তাই বিশ্বব্যাপী পারদের নির্গমন সীমিত করতে বিভিন্ন নীতি এবং বিধিনিষেধ বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন মনুষ্যসৃষ্ট পারদ নির্গমন কমার ফলে গত বিশ বছরে বায়ুমণ্ডলে পারদের মাত্রা ৭০%হ্রাস পেয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, বর্জ্য পদার্থ পড়ানো এবং খনন কার্য ইত্যাদি হলো পারদ নির্গমনের প্রধান মনুষ্যসৃষ্ট কারণ। এই পারদের পরিমাণ কমিয়ে পরিবেশকে সংরক্ষিত করাই ছিল মিনামাটা কনভেনশন অফ মার্কারীর প্রধান লক্ষ্য। গত দু দশকে পারদের মাত্রা কমায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে এই কনভেনশনের উদ্যেশ্য প্রায় সফলের পথে। এই কনভেনশনের কার্যকারিতা নির্ধারিত হয়েছিল বায়ুমণ্ডলে পারদের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে। বায়বীয় পারদের বৃহত্তম প্রাকৃতিক আধার হলো মাটি।এই মাটি থেকে নির্গত পারদ জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় এবং বায়ুমণ্ডলে পারদের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণে নির্গত পারদ আর মাটিতে সঞ্চিত পারদকে আলাদা করার জন্য বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের পারদের আইসোটোপের নিদর্শন বিশ্লেষণ করেন। গবেষকরা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চ ভূমিতে জন্মানো একটি ছোট এবং ভূমির কাছাকাছি বেড়ে ওঠা একটি বহুবর্ষজীবী গাছের পাতা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন ,ঠিক যেমন গাছের গুঁড়ির রিং বছর বছর পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে পাল্টায়,তেমনি এই গাছ প্রতি বছর পাতার বাইরে নতুন স্তর তৈরি করে, যা তার আশেপাশের পরিবেশের প্রতিফলন ঘটায়।
তাই, গবেষকরা এভারেস্টের দুটি গাছের কেন্দ্র থেকে পুরনো পাতার নমুনা সংগ্রহ করেন, যা ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলীয় পারদের স্তরের পরিবর্তন বোঝার সুযোগ করে দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাটি থেকে নির্গত পারদের পরিমাণ(৬২%) মনুষ্যসৃষ্ট পারদ নির্গমনের (২৮%) তুলনায় বেশি।এই পর্যবেক্ষিত প্রবণতাগুলি উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে, যেখানে পারদ হ্রাসের প্রমাণ পূর্বের গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ গবেষকরা মনে করেন যে, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে মনুষ্যসৃষ্ট নির্গমন কমানোর বহুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, তবে মাটি থেকে পারদ নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে আরও শক্তিশালী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।