বিশ্বজুড়ে ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকের বাড়বাড়ন্ত বিপদ ডেকে আনছে

বিশ্বজুড়ে ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকের বাড়বাড়ন্ত বিপদ ডেকে আনছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ড্রাগ রেসিস্ট্যান্স অ্যান্টিবায়োটিক – এই বিষয়ের সাথে আমরা কম বেশি পরিচিত। ওষুধের ভুল ডোজ, বেশি ওষুধ গ্রহণ, ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে আরও জেঁকে বসতে দেয়। বিশ্বজুড়ে ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিশেষ চিন্তিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে একদল বিজ্ঞানী সতর্ক করেছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে, ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকজনিত রোগও বাড়বে। ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকের ওপর এখনও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি। দ্য ল্যানসেটে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্টারডিক ইনস্টিটিউট এবং আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছেন। বছরে প্রায় ৩৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ছত্রাকঘটিত রোগে হয়। বিজ্ঞানীদের মতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা চিহ্নিত বেশিরভাগ ছত্রাক প্যাথোজেন, হয় ইতিমধ্যে প্রতিরোধী হয়ে গেছে বা দ্রুত ছত্রাকরোধী ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে। গবেষকরা মনে করেন, বর্তমানে শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াকে ফোকাস করলে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা প্রতিরোধী ছত্রাক মোকাবিলা করা যাবে না। সেপ্টেম্বরের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) -এর ওপর জাতিসংঘের মিটিঙে গবেষকরা ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাক অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাবেন।
ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু এখন কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং এটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এর জন্য চার ধরনের অ্যান্টিফাংগাল ওষুধের গ্রুপ – অ্যাস্পারজিলাস, ক্যান্ডিডা, ন্যাকাসিয়োমাইসেস গ্ল্যাব্রাটাস ও ট্রাইকোফাইটন ইন্ডোটিনি-র সাহায্যে অনেক ক্ষতিকারক ছত্রাকের ফলদায়ী চিকিৎসা করা যাচ্ছেনা। গবেষকরা জানিয়েছেন, বয়স্ক ব্যক্তি ও যাদের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল তাদের শরীরের পক্ষে এই ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ নর্ম্যান ভ্যান রাইন জানিয়েছেন, বিগত দশকে বহু ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট রোগের পেছনে ক্ষতিকারক ছত্রাকের ভূমিকা ছিল, যা বিজ্ঞানী, ডাক্তার, সরকার, ওষুধ কোম্পানির নজর এড়িয়ে গেছে। ব্যাকটেরিয়ার থেকেও ছত্রাকের ক্ষেত্রে যে সমস্যা বেশি দেখা দেয় তা হল ছত্রাকের কোশের সাথে মানুষের কোশের মিল রয়েছে। তাই কোন চিকিৎসায় ছত্রাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব যাতে মানুষের কোনো ক্ষতি না হয় তা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। অধ্যাপক ফেরি হ্যাগেন জানিয়েছেন, নতুন ধরনের ওষুধ আবিষ্কার করা বেশ কঠিন কাজ হলেও নানা নতুন ধরনের অণু নিয়ে কাজ চলছে, যাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়ার আশা রয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ দীর্ঘ গবেষণার পর যখন বাজারে আসবে কৃষিক্ষেত্রে একই ধরনের ছত্রাকনাশক তার আগেই চলে আসবে, যার থেকে ক্রস-রেসিট্যান্স ছত্রাক গোষ্ঠী তৈরি হয়ে যাবে। আর খাদ্য শস্যকে ছত্রাকের হাত থেকে রক্ষার জন্য ছত্রাকরোধী সুরক্ষা দিতে মানুষ চেষ্টা করবে। তাই গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, নির্দিষ্ট শ্রেণির অ্যান্টিফাঙ্গাল বা ছত্রাকরোধী অণুর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী চুক্তি প্রয়োজন। প্রাণী, উদ্ভিদ এবং মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সমাধান ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সহযোগিতা। জাতিসংঘের বৈঠকে ছত্রাক প্রতিরোধী সংক্রমণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + fifteen =