
কী জন্যে একজন মানুষ আরেক জনকে বিশ্বাস করে? এ প্রশ্ন তুলেছেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক ক্রিস্টিন লরিন। উত্তর খোঁজার জন্য গবেষকরা ১৯০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নিয়ে এক প্রস্থ পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাঁরা দেখতে চাইছিলেন লোকের কাছে একজনের বিশ্বাসযোগ্যতা সামাজিক শ্রেণিমর্যাদার দ্বারা প্রভাবিত হয় কিনা। এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি-তে।
অংশগ্রহণকারীদের একটা বিশ্বাস-বিশ্বাস খেলা খেলতে বলা হল। কতকগুলি কাল্পনিক চরিত্রকে আসল মানুষ ধরে নেওয়া হল। প্রতিটি অংশগ্রহণকারী একটি ফর্মে তার পরিচয় লিখে জমা দিল। “দলের” অন্যদের কাছ থেকে সে এবার তাদের পরিচয়ের কপি পেল। কতকগুলো জাল পরিচয়ে লেখা হল কেউ অ-সচ্ছলভাবে বড় হয়েছে, পড়াশোনা করেছে সরকারি ইস্কুলে, পার্ট-টাইম চাকরি করেছে। অন্য কতকগুলোতে আবার দেখানো হল তারা সুবিধাভোগী পরিবার থেকে এসেছে, নামকরা ইস্কুলে পড়েছে, বিদেশে ছুটি কাটিয়েছে।
খেলার সময় যারা ‘বিশ্বাসকারী’ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল দুটি $100 পুরস্কারের দশখানা লটারি টিকিট। তারা ইচ্ছে করলে যতগুলো খুশি লটারির টিকিট তুলে দিতে পারে দলের কাল্পনিক “বিশ্বাসভাজনদের” হতে। বিশ্বাসকারীদের বলা হল বিশ্বাসভাজনদের কাছে হস্তান্তরিত প্রতিটি টিকিটের সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যাবে এবং সে তখন নিজের খুশিমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বিশ্বাসকারীকে কতগুলি টিকিট ফেরত দেবে। কে কতগুলো টিকিট অন্যের কাছে হস্তান্তরিত করছে তা থেকে বোঝা যাবে কে আচরণগত দিক থেকে অন্যজনকে কতটা বিশ্বাস করছে। অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনি যদি অমুক লোকটিকে দশটা টিকিটই দিয়ে দেন, তাহলে তার হাতে তিরিশটা টিকিট চলে আসবে। তার মধ্যে কটা সে আপনাকে ফেরত দেবে বলে আপনার মনে হয়? ‘
অনুরূপ অন্য কতকগুলো পরীক্ষায় গবেষকরা বিশ্বাসভাজনদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক মানমর্যাদা সম্বন্ধে মিথ্যে তথ্য জানালেন। অংশগ্রহণকারীদের বলা হল অন্য খেলোয়াড়দের নৈতিকতার মান বিচার করতে। দেখা গেল, যারা কম সচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসেছে কিংবা এখনো কম সচ্ছল, তারাই আচরণগত দিক থেকে বেশি বিশ্বাসভাজন। যারা কম সচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসেছে তারা আরও বেশি বিশ্বাসভাজন।
এ থেকে দেখা যাচ্ছে, লোকে ছেলেবেলা আর বর্তমান অবস্থার মধ্যে একটা স্পষ্ট সীয়ারেখা টানে। ধরে নেয়, যারা কম সচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসেছে তারা বেশি নীতিনিষ্ঠ ও বিশ্বাসভাজন। তবে বর্তমানে যারা কম সচ্ছল তাদের প্রতি অংশগ্রহণকারীদের নৈতিক আস্থা অপেক্ষাকৃত কম বলে প্রতিভাত হল। বলেছেন লরিন।
এ থেকে একটা অন্য জিনিসও বেরিয়ে আসে। ধরা যাক আপনি বরাবরই বড়োলোক, কিন্তু সেটাকে চেপে গিয়ে হয়তো আপনার বর্তমান দশার ওপর জোর দেবেন। অপরদিকে আপনি যদি বরবারই আর্থিক অসচ্ছলতার সঙ্গে লড়াই করে থাকেন, তাহলে আপনার অনভিজাত পারিবারিক পরিচয়টা আপনার কাজে দেবে।
এ নিয়ে আরও অনেক পরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের।
সূত্র: American Psychological Association. “Why we trust people who grew up with less.” ScienceDaily. ScienceDaily, 22 May 2025.
http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/05/250522124842.htm>.