সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবি থেকে জানা গেছে যে A23a নামক অ্যান্টার্কটিক আইসবার্গ বা হিমশৈলটি প্রবল বাতাস এবং স্রোতের জন্য অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের উত্তর প্রান্তের বাইরে ভেসে চলেছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে অনুসারে, বিগত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবার বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈলটি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের গ্ল্যাসিওলজিস্ট অলিভার মার্শ বলেছেন যে এত বড়ো হিমশৈলের নড়াচড়া এক বিরল দৃশ্য এবং বিজ্ঞানীরা এর গতিপথ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফ্লেমিং বলেছেন যে হিমশৈলটি প্রায় এক বছর ধরে ভাসছে এবং সম্ভবত এর গতি বেড়েছে।
A23a হিমশৈলটি প্রায় ৪০০ মিটার পুরু এবং আয়তনে প্রায় ৪০০০ বর্গ কিমি। আয়তনে এই হিমশৈলটি নিউইয়র্ক শহরের তিনগুণ এবং গ্রেট লন্ডনের আকারের দুগুণ আর এর ওজন প্রায় এক ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার-রনে আইস শেল্ফ থেকে এটি বিভক্ত হওয়ার পর থেকে, ওয়েডেল সাগরের তলদেশে আটকে যায়।
আইসবার্গটি দক্ষিণ মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্লেমিং-এর মতে ১৯৮৬ সালের পর থেকে এটি আকারে যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায় এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে ছেড়ে যায়। ২০২০ সালে এটি প্রথম আন্দোলিত হয়। বেশিরভাগ হিমশৈলের মতোই গতি বাড়ার সাথে সাথে A23a অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্টে গিয়ে পড়বে আর তারপর আইসবার্গ অ্যালি নামে পরিচিত একটি পথে দক্ষিণ মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হবে, যেখানে অন্যান্য হিমশৈলের সাথে অন্ধকার জলে এটিকে ভাসতে দেখা যাবে। এরপর দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপে এটি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, ফলত ওই অঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে কারণ দ্বীপটি লক্ষাধিক সিল, পেঙ্গুইন এবং সামুদ্রিক পাখির প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে। এই সুবিশাল আইসবার্গ সম্ভবত তাদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে দক্ষিণ মহাসাগরে অনেক বেশি উষ্ণতা সত্ত্বেও এই বিশালাকার হিমশৈল দীর্ঘকাল ভেসে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এটি উত্তরে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে অগ্রসর হতে পারে ফলে সেখানে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হতে পারে। যেহেতু এটি সমুদ্রের স্রোতের মধ্যে দিয়ে ভেসে যাবে A23a পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। বর্তমানে দিনে পাঁচ কিলোমিটার এর গতিবেগ। বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন অ্যান্টার্কটিকার বরফে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং মহাদেশটি প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বরফ হারাচ্ছে।