বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো হিমশৈল বা আইসবার্গ এক বিশাল ঘূর্ণি থেকে বেরিয়ে এসে নড়েচড়ে আবার এগোতে শুরু করেছে। সেই ঘূর্ণিতে মাসে পর মাস আটকে থাকার পর আবার সেটি বেরিয়ে এসেছে। এর আগে প্রায় ৩৭ বছর ধরে সমুদ্রতলে আটকে ছিল এই হিমশৈল। এরপর ২০২৩ সালে সেখান থেকে মুক্ত হয়ে এগোতে শুরু করে। তারপর আবার এক বিশাল ঘূর্ণিতে আটকে পড়ে আর সেখান থেকেই দ্বিতীয়বারের জন্য মুক্ত হল আইসবার্গটি। বিজ্ঞানীরা এখন বিশাল এই বরফের চাঁইয়ের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করছেন। এমন অগুন্তি হিমশৈলের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো হিমশৈলটির নাম দেওয়া হয়েছে এ২৩এ(A23a)। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই একে “মেগাবার্গ” বলে ডাকেন। এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল নিউইয়র্ক সিটির থেকে প্রায় তিনগুণ বড়ো এবং এর ওজন ১ ট্রিলিয়ন টন। ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার আইস শেল্ফ থেকে ভেঙে ভাসতে শুরু করে এই ১ লক্ষ কোটি টন বরফের চাঁই। অত্যন্ত ধীরে ভাসতে শুরু করেই আটকে যায় ওয়েডেল সাগরের সাউথ ওর্কনে দ্বীপের কাছে সমুদ্রের তলার মাটিতে। সেখানে এর গলে যাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। সেখানেই এ২৩এ আটকে ছিল ৩০ বছর ধরে। একটা বরফের দ্বীপের মতো অবস্থান করছিল এ২৩এ।
গত বছরের শেষের দিকে, এ২৩এ সমুদ্রতলের মাটি থেকে মুক্ত হয়ে অ্যান্টার্কটিকা থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। কিন্তু এটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। মাত্র কয়েক মাস পরে, বরফের চাঁইটি দক্ষিণ অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে সমুদ্রের স্রোতের এক ঘূর্ণায়মান জলরাশির মধ্যে আটকে পড়ে। তবে ১৩ই ডিসেম্বর মেগাবার্গটি টেলর কলাম থেকে মুক্ত হয়ে যায়, এবং দক্ষিণ মেরু থেকে সরে যেতে শুরু করে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (BAS) একটি বিবৃতি এমন কথাই জানিয়েছেন। এই দৈত্যাকার আইসবার্গ যে জলরাশির মধ্য দিয়ে যায় তাতেই পুষ্টি সরবরাহ করতে থাকে। ক্রমে সে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত গরম আবহাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত উষ্ণ জলের দিকে। গরম আবহাওয়া ও গরম জলের সংস্পর্শে এসে হিমশৈলের কী অবস্থা ঘটে এখন তা নিরীক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা। স্থানীয়ভাবে এটি বাস্তুতন্ত্রের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে সেটাও দেখার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।