বিস্মৃতির পাতায় পদার্থবিদ্যার যুগান্তকারী আবিষ্কার!

বিস্মৃতির পাতায় পদার্থবিদ্যার যুগান্তকারী আবিষ্কার!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ মে, ২০২২

১৯৪৫-এর শেষের দিকে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে মৌলিক কণা অনুসন্ধানের জন্য একটি বিশেষ কণাত্বরকের নকশা তৈরি করেছিলেন কিংবদন্তি পদার্থবিদ জেমস চ্যাডউইক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউরোপ-সহ গ্রেট ব্রিটেন। অর্থনীতিও সম্পূর্ণ তলানিতে। তারপরও নিউট্রন আবিষ্কারকর্তা চ্যাডউইক শেষপর্যন্ত তৈরি করেছিলেন যুগান্তকারী সেই কণাত্বরক যন্ত্র। সম্মতি দিয়েছিল অনিচ্ছুক ব্রিটিশ সরকার। ঐতিহাসিকদের মনে হয়েছে অনিচ্ছা সত্বেও ব্রিটিশ সরকারের সম্মতি দেওয়ার কারণ তাদের আশা ছিল জেমস চ্যাডউইকের এই যন্ত্র হয়তো পরমাণু বোমার চেয়েও আরও সাংঘাতিক কোনো অস্ত্রের সন্ধান এনে দেবে ভবিষ্যতে। কণাত্বরক যন্ত্রটির নাম সিঙ্ক্রোসাইক্লোট্রন। আজ, সেই ঐতিহাসিক আবিষ্কার বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে!
লিভারপুলের মাউন্ট প্লিসান্টের ওপর এই যন্ত্রের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল প্রকাণ্ড এক বাড়ি। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ পাউন্ড। শুধু সিঙ্ক্রোসাইক্লোট্রন যন্ত্রটি নির্মাণেই চ্যাডউইকের লেগেছিল ৫ লক্ষ পাউন্ড। ১৫৬ ইঞ্চি ব্যাসের যন্ত্রটি অনায়াসেই ৪০০ মেগা ইলেকট্রনভোল্ট শক্তি সরবরাহ করতে পারত একটি প্রোটনকে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রকাণ্ড এই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছিল কেবলমাত্র একটি তড়িৎচুম্বকের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। যেখানে অন্যান্য সমস্ত কণাত্বরকেই ব্যবহৃত হত চুম্বকের সমন্বয়। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই যন্ত্রের নির্মাণ চলাকালীনই স্বেচ্ছায় তিনি বদলি হয়েছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চ্যাডউইকের সহকর্মী মাইক মুর, জন গ্রেগরি এবং অ্যালবার্ট ক্রু প্রথম পরীক্ষা চালান এই যন্ত্রে। পরবর্তী ১৪ বছরে পদার্থবিদ্যার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘অত্যাধুনিক’ কণাত্বরক। কিন্তু লিভারপুলের মাউন্ট প্লিসান্টের ওপর সেই গবেষণাগারও আজ নেই! ১৯৬৮-তে সেই গবেষণাগার ভেঙে তৈরি করা হয়েছে লিভারপুলের অন্যতম স্থাপত্য মেট্রোপলিটন ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রাল। আর চ্যাডউইকের যন্ত্র? ১৯৬৮ সালে একপ্রকার আবর্জনার মতোই ফেলে দেওয়া হয়েছিল যন্ত্রটিকে। ধাতব অংশগুলি অধিকাংশই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল কিলো-দরে। শুধুমাত্র রেহাই পেয়েছিল ঐতিহাসিক এই যন্ত্রটির রোটেটিং কনডেন্সার এবং ফ্রেম। পরবর্তীতে যা লিভারপুলের ওয়ার্ল্ড মিউজিয়ামে সংরক্ষিত হয়।