প্রকৃতির কোলে, বাগানে বা বারান্দায় অথবা ছাদে, রঙ-বেরঙের ফুলের ছোঁয়ায় বদলে দেয় চারিদিক। ফুলের সান্নিধ্যে এলে আমাদের মনখারাপও ভালো হয়ে যায়। এখন তো শীতকাল, আর এই শীতের মরসুমে এক চিলতে মাটিতেও নানা রঙের বোল তুলতে পারে চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, গাঁদার দল। আমাদের দেশে ঋতুরানি বর্ষাতেও দেখা যায় ফুলের মেলা- জুঁই, বেল, দোপাটি। তবে এমন ফুলের নাম কী কখনও শুনেছেন যা বৃষ্টিতে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। হ্যাঁ, একদম ঠিক শুনেছেন। ইংরেজিতে এদের বলে স্কেলিটন ফ্লাওয়ার। এ ফুল বড়োই বিচিত্র। যখন প্রকৃতি শুষ্ক থাকে তখন এদের দেখতে লাগে সাদা রঙের, কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে এ ফুল দেখায় একেবারে স্বচ্ছ। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এরা ডিফাইলিয়া গ্রেই নামে পরিচিত, এবং বারবারিডেসি ফ্যামিলির অন্তর্গত। প্রকৃতিতে এ ফুল বিরল। সারা বিশ্বে মাত্র তিনটি দেশে এই ফুল দেখতে পাওয়া যায় – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং জাপান। প্রকৃতিতে অন্য কোনও ফুলে এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়না।
এখন, প্রশ্ন হল, প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার কারণ কী? সাদা পাপড়ির টগর বা সাদা গোলাপ তো কখনও বৃষ্টিতে ভিজে অমন স্বচ্ছ হয়ে ওঠে না?
পাখি বা প্রজাপতির মতো পরাগায়নকারীদের আকর্ষণ করতে ফুলের পাপড়ি রঙিন হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই রঞ্জক সংশ্লেষণে তাদের শক্তির একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। প্রায় ৯৫% সপুষ্পক উদ্ভিদের সাদা রঙের ফুলের পাপড়িতে ফ্ল্যাভোন এবং ফ্ল্যাভোনলের মতো রঞ্জক থাকে যার ফলে এই ফুল সাদা রঙের হয়। তবে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ডিফাইলিয়া ফুলে এধরনের কোনো রঞ্জক নেই কারণ এই ফুল তার গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে সাদা। কোনও বস্তুতে আলো পড়লে সেই বস্তুটি বর্ণালীর কিছু রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে আর কিছু রঙ প্রতিফলিত করে। যে রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে, সেটিই ওই বস্তুর রঙ হিসেবে আমরা দেখি। যেমন সবুজ পাতায় উপস্থিত ক্লোরোফিল রঞ্জক সূর্যের সাতটি রঙের ছয়টিই শুষে নেয়। বাকি একটি রঙ, অর্থাৎ সবুজ রঙটি প্রতিফলিত করে। তাই আমরা পাতাকে সবুজ রঙের দেখি। আবার বস্তু সাদা দেখায় কারণ তা বর্ণালীর কোনও রঙই শোষণ করে না সব প্রতিফলন করে। যে সব সাদা ফুলে রঞ্জক রয়েছে সেই রঞ্জকগুলোই আলো শোষণ করে, তাই ফুলগুলো সাদা দেখায়। ডিফাইলিয়ার ক্ষেত্রে কারণটা তার রঞ্জক নয় কারণ তার কোশের গঠন এবং তা কীভাবে আলো ছড়িয়ে দেয়। ডিফাইলিয়া ফুলে কোশগুলো আলগাভাবে সাজানো থাকে আর এর আন্তঃকোষীয় স্থানে থাকে বায়ু। এই বায়ু আলোর সমস্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে প্রতিফলিত করে। আর এই প্রতিফলনের জন্য ফুলটিকে শুষ্ক আবহাওয়ায় সাদা দেখায়। কিন্তু বৃষ্টির সময় কোশের মাঝে বায়ুর বদলে জল ঢুকে যায়। কোশের বাইরের জল ও ভিতরের তরল বা সাইটোলিম্ফের প্রতিসরাঙ্ক একই থাকে। ফলে, যখন আলো পড়ে, তখন আলো কেবল তরলের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হয়, খুব বেশি প্রতিফলিত হয় না। আর প্রতিফলন ছাড়া, আমরা কোনও রঙ দেখতে পাই না। তাই ডিফাইলিয়া ফুলটি তখন কাচের মতো স্বচ্ছ দেখায়।