বৃহস্পতির চাঁদে পাড়ি দিল ইউরোপা ক্লিপার

বৃহস্পতির চাঁদে পাড়ি দিল ইউরোপা ক্লিপার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

সৌরজগতে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপায় বরফে ঢাকা বিশাল সমুদ্র রয়েছে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। এই নিয়ে তাদের কৌতূহলেরও শেষ নেই। সেই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ইউরোপায়-এ বার মহাকাশযান পাঠাচ্ছে নাসা। নাসার ইউরোপা ক্লিপার বৃহস্পতিতে তার এই দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছে। মহাকাশযানটি ১৪ই অক্টোবর দুপুর ১২:০৬ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়। এখনও পর্যন্ত বৃহস্পতির ৯৫টি উপগ্রহের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ইউরোপা উপগ্রহটিতে বরফের আস্তরণের নীচে তরল জলের বিশাল সমুদ্র থাকতে পারে। সেই জলে প্রাণের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেই সংক্রান্ত অনুসন্ধানই নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশনের উদ্দেশ্য। ইউরোপা ক্লিপার নাসার তৈরি করা সবচেয়ে বড়ো মহাকাশযান যা প্রথম পৃথিবীর বাইরে কোনো মহাসাগর অধ্যয়নের জন্য চলেছে। মহাকাশযানটি তার যাত্রাপথে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার ভ্রমণ করবে। পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের সাহায্য নিয়ে বৃহস্পতি পর্যন্ত পৌঁছতে হবে নাসার মহাকাশযানকে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী বৃহস্পতি পর্যন্ত পৌঁছতে ছ’বছর লাগবে নাসার ইউরোপা ক্লিপারের। ২০৩০ সালের এপ্রিল মাসে সেখানে পৌঁছনোর পর বৃহস্পতির চারপাশে পাক খাবে এই মহাকাশযান। মহাকাশযানটি ৪৯ বার ইউরোপাকে অতিক্রম করবে।
ইউরোপা আকারে আমাদের চাঁদের থেকে একটু ছোটো। কিন্তু তাতেই রয়েছে পৃথিবীর চেয়ে বহু গুণ বড়ো প্রকাণ্ড সমুদ্র। ইউরোপার সমুদ্রটি রয়েছে তার উপপৃষ্ঠে। উপরে বরফের মোটা চাদর। ১৯৯০-এর দশকে নাসার গ্যালিলিও মিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ইউরোপার বরফের নীচে একটি বিশাল, লবণাক্ত জলের সমুদ্র রয়েছে যা পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরের মিলিত জলরাশির পরিমাণের থেকেও বেশি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণও পেয়েছেন যে ইউরোপা তার পৃষ্ঠের নীচে জৈব যৌগ এবং শক্তির উত্স ধারণ করতে পারে। যদি এই মিশন প্রমাণ করতে পারে যে ইউরোপা বাসযোগ্য, তবে তা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দিশা উন্মোচন করবে। ২০৩১ সালে, মহাকাশযানটি ইউরোপার পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকবে। ইউরোপা ক্লিপারে রয়েছে নয়টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র- একটি মাধ্যাকর্ষণ পরীক্ষার যন্ত্র, একটি রাডার যা বরফ ভেদ করতে পারে, ক্যামেরা এবং কিছু তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র যা বরফের উষ্ণতা পর্যবেক্ষণ করবে। বৃহস্পতিতে অতি ক্ষীণ সূর্যালোক পৌঁছায়। তাই যন্ত্রগুলোকে শক্তির যোগান দিতে ইউরোপা ক্লিপারে সবচেয়ে বড়ো সোলার অ্যারে ব্যবহার করা হয়েছে যা নাসা আগে কখনও একটি আন্তঃগ্রহ মিশনের জন্য ব্যবহার করেনি৷ বিজ্ঞানীরা এই অভিযানের সাফল্য সম্বন্ধে আশাবাদী।