
কাপুর পায়া বোর্নিওর পিট জলাভূমি অরণ্যের এক বিখ্যাত গাছ। এরা এদের প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে উঁচুতে উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিশালাকার এই ড্রাইওব্যালানপস রাপ্পা গাছ যা স্থানীয়ভাবে কাপুর পায়া নামে পরিচিত, ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত গাছটির পাতার জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ বিজ্ঞানীদের এই বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের গভীর ঐতিহাসিক শিকড় অন্বেষণ করতে সাহায্য করছে।
এশিয়ার ক্রান্তীয়- আরদ্র বনভূমির জীবাশ্ম সংরক্ষণ এতদিন তেমন সমৃদ্ধ ছিল না, তাই ব্রুনাইতে প্রায় দুই মিলিয়ন বছর আগের পাতার জীবাশ্ম আবিষ্কার এক যুগান্তকারী ঘটনা। কয়েকটি নমুনার কিউটিকল (পাতার বাইরের স্তর) এতটাই ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল যে গবেষকরা সেগুলিকে বর্তমান জীবিত গাছের পাতার সাথে তুলনা করতে সক্ষম হন। আমেরিকান জার্ণাল অফ বোটানির গবেষক দলের আণুবীক্ষণিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে আধুনিক কাপুর পায়ার সঙ্গে এটির সম্পূর্ণ মিল রয়েছে—ফলে এই প্রাচীন পাতাটিকে বিপন্নপ্রায় জীবিত ক্রান্তীয় বৃক্ষের প্রথম প্রত্যক্ষ জীবাশ্ম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
প্রধান গবেষক টেংজিয়াং ওয়াং জানান, “এই আবিষ্কার এশিয়ার ক্রান্তীয়- আরদ্র বনভূমির প্রাচীন ইতিহাসের একটি বিরল জানালা খুলে দিয়েছে। এখন আমাদের কাছে জীবাশ্মগত প্রমাণ রয়েছে যে এই চমৎকার উদ্ভিদ প্রজাতিটি দশ লক্ষ বছর ধরে বোর্নিওর অরণ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ—যা এটির বাস্তুসংস্থানগত গুরুত্ব এবং জীবিত বনভূমিগুলোর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করে।”
“কাপুর পায়া” হলো এশিয়ার বৃষ্টিঅরণ্যগুলির প্রধান বৃক্ষ পরিবার ডিপ্টেরোকারপাসি-এর অংশ, যা কার্বন সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কৃষি, কাঠ সংগ্রহ ও দাবানলের কারণে এই পরিবারভুক্ত বেশিরভাগ বৃক্ষ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষকরা উল্লেখ করেন যে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির বিবর্তনীয় ইতিহাসের অনুধাবন আধুনিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে পারে। তাঁরা বলেন নতুনভাবে আবিষ্কৃত এই পাতার জীবাশ্ম, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিলীয়মান বনভূমির বিবর্তনীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে।