ভবিষ্যতের জলবায়ু – এখনও কি উদাসীন থাকব আমরা?

ভবিষ্যতের জলবায়ু – এখনও কি উদাসীন থাকব আমরা?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুলাই, ২০২৪
জলবায়ু

খামখেয়ালিপনা কার নেই? বিগত কয়েক বছর, খামখেয়ালিদের লিস্ট এ ক্রমাগত নাম টিকিয়ে রেখেছে – আবহাওয়া। ঝড়, বন্যা, কনকনে ঠান্ডা আবার উল্টোতে খরা, দাবানল, তাপ প্রবাহ। সবটাই মাত্রারিক্ত। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় জেরবার, অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নতুন জলবায়ু অঞ্চলে স্থানান্তরিত হতে পারে, এমন কথাই জানাচ্ছে এই গবেষণা।

জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসিস) থেকে তথ্য ব্যবহার করে, ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের স্পেসিয়াল ইকোলজিস্ট ম্যাথিউ ফিটজপ্যাট্রিক বিশ্বব্যাপী ৪০,৫৮১টি স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে এমন কিছু জায়গার হদিশ দিচ্ছে। এই জায়গাগুলো বর্তমানে একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ২০৮০ সালে, এই জায়গাগুলি এইধরনের আরও জলবায়ুর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। আমাদের বসবাসের এলাকার জলবায়ু কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা খুঁজে দেখতে সাহায্য করবে, একটি নতুন ইন্টারেক্টিভ মানচিত্র, (দ্য ফিউচার আরবান ক্লাইমেটস)। ভবিষ্যতে যে জলবায়ুর সম্মুখীন আমরা হতে চলেছি তা অনেকটাই নিরক্ষরেখার জলবায়ুর মতো। তাতে উত্তর-দক্ষিণের ভাগ গুলিয়ে যাবে। গবেষকরা বলছেন, আগামী ৫০ বছরে, উত্তর গোলার্ধের উত্তরের শহরগুলো দক্ষিণের শহরগুলোর মতো হয়ে উঠতে চলেছে। ২০১৫ সালে হিসেব যা বলেছে তাতে, ১৯৫০ সালের তুলনায় ২০১০ সালে, পৃথিবীর প্রায় ৬% জায়গা উষ্ণ এবং শুষ্ক জলবায়ুর দিকে পরিবর্তিত হয়েছে।

মানচিত্রটি, জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রবণতার কথা শুধু জানাবেনা, তার সাথে ২০৮০ সালে আমাদের পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে তাও জানাবে। এখানেই থেমে নেই – আমরা আজকের পরিস্থিতিতে কোনোরকম পরিবর্তন আনতে পারলে পৃথিবীর জলবায়ু, ভবিষ্যতে কেমন হবে তাও জানা যাবে, নতুন মানচিত্র থেকে। জনসংখ্যার প্রায় ৪০% নিরক্ষীয় অঞ্চলে বাস করে। সুতরাং ৩.৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এমন এক জলবায়ুর সম্মুখীন হতে চলেছে যা আজকের তুলনায় অনেক বেশি চরম। কিছু গবেষক আশঙ্কা করছেন যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বেশ কিছু অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। সেখানে আমাদের শরীর অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা সহ্য করতে পারবে না। এই চরম আবহাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। সুতরাং আশঙ্কা বাস্তবায়িত হতে দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই। তবে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলগুলো যেমন মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ ফ্লোরিডা এবং উত্তর আফ্রিকার জলবায়ু ভবিষ্যতে কেমন হবে তা এখনই জানা কঠিন।

পূর্বাভাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, চরমসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। জীবাশ্ম জ্বালানীর ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছেনা সরকার বা বেসরকারি উদ্যোগে। আরও চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছি অদূরেই। এরপরেও আমরা নিরুত্তাপ হয়ে বসে থাকবো। হঠাৎ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার ঝাঁকুনিতে প্রশ্ন করবো, তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়ে এত উদ্বিগ্নতা কিসের?