ভাষা => দৃশ্য => জ্ঞান

ভাষা => দৃশ্য => জ্ঞান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ মে, ২০২৫

চেনা জিনিস দেখে কতটা তথ্য মনে রাখতে পারছি তা নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্কের দৃশ্যগত ও ভাষিক প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে যোগাযোগের উপর। ২০ মে তারিখে ‘প্লস বায়োলজি’ পত্রিকায় এই মর্মে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন চীনের নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বো লিউ এবং তাঁর সহযোগীরা।
তাঁরা দেখিয়েছেন, একটা জিনিসকে দেখা আর তার সম্বন্ধে দৃশ্যগত তথ্য (যেমন তার রং) জানার কাজটা মস্তিষ্কের একই অংশগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ধরা যাক একটা হলুদ কলা দেখলাম। জিনিসটাকে দেখা আর কলা নামক ওই জিনিসটার রং যে সচরাচর হলুদ হয়, এই জ্ঞান মস্তিষ্কবল্কলের একই অঞ্চলকে উত্তেজিত করে। তার নাম ‘ভেন্ট্রাল অক্সিপিটো-টেম্পোরাল কর্টেক্স’ (ভি ও টি সি)। কিন্তু এমন সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে যে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের সেইসব অঞ্চলও জড়িত যারা ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত। দেখা গেছে, স্মৃতিভ্রষ্ট রোগীদের দৃশ্যগত প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত অঞ্চলগুলো, যথা ‘অ্যান্টিরিয়র টেম্পোরাল লোব’ (এ টি এল) মোটের উপর স্বাভাবিক থাকলেও তাদের জিনিসের রং বুঝতে কষ্ট হয়।
প্রশ্ন হল, তাহলে কি জিনিসপত্র সম্বন্ধে তথ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য মস্তিষ্কের ভাষিক আর সংবেদনগত অনুষঙ্গের সিস্টেমগুলির মধ্যে যোগাযোগ থাকাটা জরুরি? এই ব্যাপারটা অনুধাবন করবার জন্য গবেষকরা একটা পরীক্ষা করলেন। দেখতে চাইলেন, স্ট্রোক হয়ে যেসব রোগীর ওই দুটি সিস্টেমের মধ্যে স্নায়ু-সংযোগের পথ নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের কি একটা জিনিসকে তার সুপরিচিত রঙের অনুষঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়?
তাঁরা ৩৩ জন স্ট্রোক-আক্রান্ত রোগীর রং-চেনার আচরণ পরীক্ষা করলেন। সেই আচরণকে তুলনা করা হল জনতাও্বিক বিচারে তুল্যমূল্য ৩৫ জন স্বাভাবিক লোকের সঙ্গে। এফ এম আর আই এবং ডিফিউশন ইমেজিং যন্ত্র সহযোগে তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকর্ম রেকর্ড করা হল। তা থেকে তাদের মস্তিষ্কের ভাষিক অঞ্চলগুলির সঙ্গে তাদের ভিওটিসি-র শ্বেতবস্তু-সংযোগের মানচিত্র আঁকা হল। দেখা গেল, ভাষিক আর দৃশ্যগত প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে যোগাযোগ জোরালো থাকলে ভিওটিসিতে জিনিসের রং বোঝার ক্ষমতা বাড়ে। এইসব রোগী জিনিসটির সঙ্গে তার রং সংক্রান্ত জ্ঞান মেলানোর কাজে বেশি পটুতার পরিচয় দেন। এই ধরণের ক্রিয়াকে রোগীদের স্ট্রোক-জনিত ক্ষত, সেই সংক্রান্ত বোধবুদ্ধিগত প্রক্রিয়াদি, কিংবা দৃশ্যগত প্রক্রিয়াকরণের পুরোনো কোনো সমস্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। গবেষকদের মতে এই ফলাফল মস্তিষ্কের মধ্যে দৃশ্য আর ভাষার মধ্যে এক সুপরিশীলিত যোগাযোগকে তুলে ধরছে। কোনো জিনিস সম্পর্কে ধারণা সঞ্চয় করে রাখা আর সেই ধারণা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা নির্ভর করছে দৃশ্যগত আর ভাষিক সিস্টেমগুলির মধ্যে বিশ্লেষণী যোগাযোগের ওপর। কলা নামক জিনিসটির রং যে হলুদ এই জ্ঞান যার উদাহরণ। এই যোগাযোগ বিঘ্নিত হলে মস্তিষ্কের ক্রিয়া আর আচরণ দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভাষা শুধুই জ্ঞাপন করার একটি মাধ্যম নয়, সংবেদ-অভিজ্ঞতাগুলি কীভাবে স্নায়ুপথের কাঠামো ধরে জ্ঞানে পরিণত হয়, সে ব্যাপারটিকে ভাষা খুব মৌলিকভাবে রূপ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =