ভিনগ্রহে উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব কী রয়েছে?

ভিনগ্রহে উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব কী রয়েছে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুলাই, ২০২৪

বিজ্ঞানের কাছে আমাদের বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর আছে, কিন্তু জীবন কীভাবে শুরু হয়েছিল বা কেন পৃথিবীতেই শুধুমাত্র জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে আর অন্য কোথাও নেই সেসব প্রশ্নের একটিরও কিন্তু জবাব নেই। এখনও অবধি, ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান করা এমন একটি কাজ যার কোনো অন্ত নেই বা কোনো সদুত্তরও নেই, কিন্তু অবশেষে ভাবা হচ্ছে হয়তো বা ভূ-বিজ্ঞানীদের কাছে এর উত্তর থাকতে পারে। টেক্সাস এবং জুরিখে সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির নতুন গবেষণা অনুসারে ভূতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীতে মহাসাগর, মহাদেশ এবং প্লেট টেকটনিকের উপস্থিতির কারণেই সম্ভবত উন্নত ভিনগ্রহের সভ্যতার কোনো প্রমাণ নেই।
নেচার’স সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত, প্রতিবেদনটি “অ্যাক্টিভ কমিউনিকেটিভ সিভিলাইজেশন”-এর অভাবের কথা বলেছে এবং ড্রেক সমীকরণের পরিমার্জন, পরিবর্ধনের পরামর্শ দিয়েছে। ১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন বিখ্যাত সমীকরণ ‘ড্রেক ইক্যুয়েশন’। ড্রেক সমীকরণ হল একটি সূত্র যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের ছায়াপথে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম বুদ্ধিমান সভ্যতার সংখ্যা অনুমান করতে ব্যবহার করে। তবে ড্রেক ইক্যুয়েশনের সমস্যা ছিল- অনিশ্চয়তা। ওই সমীকরণ অনুযায়ী, ভিনগ্রহীদের কোনও সভ্যতা যেমন না-ও থাকতে পারে, তেমনই অমন সভ্যতার সংখ্যা কয়েকশো কোটিও হতে পারে। তাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই সমীকরণকে সমর্থন করার জন্য কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই রহস্যটি ফার্মি প্যারাডক্স নামে পরিচিত। ফার্মি প্যারাডক্স অনুসারে মহাবিশ্বে ভিনগ্রহীদের সভ্যতার অস্তিত্বের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনই বাস্তবে এই ধরনের সভ্যতার প্রমাণ বা তার সাথে যোগাযোগের কোনও সূত্র নেই। পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মির নামে এই দ্বন্দ্বের নামকরণ করা হয়েছে। নতুন এই গবেষণা অনুসারে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন বড়ো বড়ো মহাসাগর, মহাদেশ এবং পৃথিবীতে মধ্যে অবস্থিত প্লেটের চলাচল বা প্লেট টেকটোনিক যা ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল। অধ্যাপক ডাঃ রবার্ট স্টার্ন, নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লিখেছেন যে প্রায় চার বিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু জটিল জীবের জন্ম হয় মাত্র ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে, আর টেকটনিক প্লেটের আন্দোলন বা নড়াচড়াও শুরু হয়েছে প্রায় ওই সময়কাল থেকেই। প্লেট টেকটনিক-এর তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ার অর্থাৎ উপরের ম্যান্টেল এবং ক্রাস্ট – প্লেট নামক অংশে বিভক্ত যা নড়াচড়া করে। এই আন্দোলনের ফলে পাহাড়, আগ্নেয়গিরি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসাগরের সৃষ্টি হয়। মূলত, পৃথিবীর প্লেট টেকটনিক এবং মহাদেশ ও মহাসাগরের অস্তিত্ব উন্নত জীবনের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে এই ধরনের গ্রহ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম (০.০০০০৩ থেকে ০.০০২–এরও কম)। সুতরাং তারা মনে করেন উপযুক্ত অবস্থার এই অভাব “অ্যাক্টিভ কমিউনিকেটিভ সিভিলাইজেশন”-এর প্রমাণের অভাব ব্যাখ্যা করতে পারে।