ভূমিকম্প গঙ্গানদীর গতিপথ পালটে দিয়েছে

ভূমিকম্প গঙ্গানদীর গতিপথ পালটে দিয়েছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ জুন, ২০২৪

২৫০০ বছর আগে একটা বড়ো ভূমিকম্প আমাদের অতি পরিচিত বৃহত্তম এক নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। যা ভাবছেন, তা ঠিক – নদীটি আমাদের রোজকার চেনা গঙ্গা নদী। এই বিরাট ভূমিকম্পের ধাক্কা গঙ্গা নদীর মূল চ্যানেলকে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পরিবর্তন করেছিল। বিজ্ঞানীরা নদী-পথের অনেক পরিবর্তন নথিভুক্ত করেছেন, যাকে অ্যাভালশন বলা হয়, তাদের মধ্যে কিছু কিছুতে ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া থাকে, তবে এত বড়ো পরিবর্তন আগে কোথাও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন গবেষণার সহ-লেখক মাইকেল স্টেকলার, যিনি কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের অন্তর্গত ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির একজন ভূ-পদার্থবিদ। বদ্বীপ অঞ্চলে নদীখাতের পরিবর্তন তাও এত বড়ো নদীর ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে ১৬০০ মাইল প্রবাহিত হয়ে আরও নানা নদীর সাথে মিশে, শেষে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সাথে মিলে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করে গঙ্গা নদী বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। আয়তনের দিক দিয়ে এটা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, গবেষকরা দেখেছেন যে সম্ভবত নদীর পূর্বের প্রধান চ্যানেল, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। এটা প্রায় ১.৫ কিলোমিটার চওড়া একটি নীচু এলাকা যা বর্তমান নদীর গতিপথের প্রায় ১০০ কিলোমিটার জুড়ে মোটামুটি সমান্তরালে মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। কাদা দিয়ে ভরা, এতে ঘন ঘন বন্যা হয়, যা ধান চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। ২০১৮ সালে গবেষকরা কাদার অনুভূমিক স্তর ভেদ করে হালকা রঙের বালির স্বতন্ত্র উল্লম্ব অংশ দেখতে পান। এটা ভূমিকম্পের একটা সুপরিচিত বৈশিষ্ট্য। এই ধরনের জলা এলাকায়, দীর্ঘস্থায়ী ঝাঁকুনি চাপা পড়া বালির স্তরগুলোকে চাপের ফলে ওপরের দিকে উঠিয়ে দেয়। এতে যেন বালির আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়, যা পৃষ্ঠে বিস্ফোরিত হতে পারে, এগুলো সিসমাইট নামে পরিচিত। এই অঞ্চলে সিসমাইট ৩০ বা ৪০ সেন্টিমিটার চওড়া যা ৩ থেকে ৪ মিটার কাদা কেটে ওপরে উঠেছে।
নদীখাত পরিবর্তনকারী এই ভূমিকম্পের দুটো উৎসের সম্ভাবনা থাকতে পারে। একটা হল দক্ষিণ ও পূর্বে একটা সাবডাকশন জোন, যেখানে সমুদ্রের ভূত্বকের একটি বিশাল প্লেট বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের নীচে নিজেদের ঝাঁকুনি দিচ্ছে। অথবা উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে বিশাল স্প্লে ফল্ট যা ধীরে ধীরে বাড়ছে কারণ ভারতীয় উপমহাদেশ ধীরে ধীরে এশিয়ার বাকি অংশের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। তবে গঙ্গানদীর মতো এরকম বিপর্যয় টেকটোনিক্যালি সক্রিয় অংশে অবস্থিত গঙ্গা সহ নানা নদীর ক্ষেত্রে হতে পারে, যেমন চীনের হোয়াং হো, মায়ানমারের ইরাবতী।