
বিজ্ঞান এবং মানবিকীবিদ্যা (হিউম্যানিটিজ ) এই দুয়ের মধ্যে বিভাজন দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ভেঙ্কি রামকৃষ্ণণ জয়পুর সাহিত্য উৎসবে বিজ্ঞান এবং মানবিকীবিদ্যার (যেমন সাহিত্য, ইতিহাস এবং দর্শন) মধ্যে সেতুবন্ধনের
গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। এই দুই সংস্কৃতির মধ্যে ব্যবধান শুধুমাত্র কেতাবী জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষ যদি বিজ্ঞান এবং কলা এই দুটি বিষয়কেই সমানভাবে বোঝার চেষ্টা করে তাহলে নানা অজ্ঞতা এবং ভুল তথ্য বিষয়ে সজাগ হতে পারবে, অনেক ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। তিনি বলেন, বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, মহামারী এবং মারাত্মক অস্ত্রের ব্যবহারের মতো সমস্যাগুলি বর্তমানে বড়ো আকার ধারণ করেছে। এজন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সাথে মানব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা থাকাও প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো প্রযুক্তির সম্ভাব্য সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি তার ঝুঁকিও কম নয়। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির নৈতিক, অনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব বুঝতে আমাদের মানবিকীবিদ্যার সাহায্য প্রয়োজন।এই দুইয়ের মেলবন্ধনকে পাথেয় করে আমরা ভবিষ্যতের পথে আরও ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারব । এই প্রসঙ্গে তিনি সিপি স্নো র বিখ্যাত বই ‘দ্য টু কালচারস ‘এর উল্লেখ করেন। তিনি বিশ্বের ক্রমবর্ধমান যাবতীয় সমস্যাগুলিকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য বিজ্ঞান এবং মানবিকী বিদ্যার মধ্যে ব্যবধান দূর করার উপর জোর দিয়েছেন। তার মতে আমাদের বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিগত, সামাজিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল। এগুলিকে কেবলমাত্র বিজ্ঞান বা কেবলমাত্র মানবিকী বিদ্যা দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। তিনি চান এমন এক পৃথিবী যেখানে বিজ্ঞানীরাও ইতিহাস এবং সাহিত্যের কদর করবেন । আবার বিজ্ঞান ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রের মানুষেরাও মৌলিক বিজ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিবহুল হবেন । তিনি বলেন আমাদের সেইসমস্ত বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করতে হবে যারা এই পৃথক দুটি ক্ষেত্রকে মেলানোর চেষ্টা করবেন। এই বিশেষীকরণের যুগে আমাদের এমন এক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে যাতে বিজ্ঞান এবং মানবিকী বিদ্যা উভয় বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে একটি প্রকৃত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হয়।এর মধ্যে দিয়েই সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এবং মানবিকী বিদ্যা এই দুটোর চিরাচরিত ব্যবধানকে ভেঙে ফেলতে হবে। তাঁর মতে বিজ্ঞানী এবং লেখকদের দায়িত্ব হবে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তোলা। যাতে কলা বিভাগের মানুষেরাও বিজ্ঞান সম্পর্কে শিখতে পারেন এবং তাদের কাজে সেই জ্ঞান ব্যবহার করতে পারেন । সবশেষে তিনি বলেন, এই বিভাজন দূর করার ক্ষমতার ওপরই আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।