ভ্যান গগের আঁকা আকাশ ভৌত বিজ্ঞানে?

ভ্যান গগের আঁকা আকাশ ভৌত বিজ্ঞানে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভ্যান গগ ১৮৮৯ সালের জুন মাসে তারায় ভরা রাতের আকাশ – ‘স্টারি নাইট’ এঁকেছিলেন। প্রায় ছমাস আগে নিজের হাতে নিজের বাঁ কান শিল্পী কেটে নিয়েছেন। মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য এই সময় তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সের এক মানসিক হাসপাতালে বসবাস করছিলেন, আর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই মাস্টারপিস অয়েলপেন্টিং, শিল্পীর ঘরের জানালা থেকে ঘূর্ণায়মান আকাশের এক দৃশ্য, যার সামনে শিল্পী এক কাল্পনিক গ্রাম যোগ করেছিলেন। বিশদ ব্রাশস্ট্রোক এবং উজ্জ্বল রঙের জন্য বিখ্যাত এই পেইন্টিং সম্প্রতি চীনের গবেষকদের নজর কেড়েছে। তারা এতে আঁকা সর্পিল আকৃতি, আর তরল ও গ্যাসীয় গতিবিদ্যায় দেখা প্যাটার্নের মধ্যে কিছু মিল শনাক্ত করেছেন। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের বিখ্যাত এই পেইন্টিং-এর সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অশান্ত, ঘূর্ণায়মান অবস্থার বেশ আকর্ষণীয় মিল রয়েছে। গবেষকদের বক্তব্য, এই অসাধারণ শিল্পীর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে আশ্চর্যজনকভাবে বিশদ ধারণা ছিল। ফিজিক্স অফ ফ্লুইডস জার্নালে, গবেষকরা পেইন্টিংগুলোতে ব্যবহৃত ব্রাশস্ট্রোক এবং রঙের খুঁটিনাটি বিবরণ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের বিখ্যাত পেইন্টিং স্টারি নাইটের অশান্ত, ঘূর্ণায়মান আকাশের সাথে আমাদের বাস্তব-বিশ্বের বায়ুমণ্ডলে ঘটে চলা অদৃশ্য গ্যাসীয় গতিবিদ্যা প্রক্রিয়ার অনেক মিল রয়েছে। চীনের জিয়ামেন ইউনিভার্সিটির তরল গতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং সমুদ্রবিজ্ঞানী ইয়ংজিয়াং হুয়াং, গবেষণার সহ-লেখক জানিয়েছেন, আকাশের গতিশীলতা শিল্পীর সহজাত অনুভূতি দিয়ে আঁকায় প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা পেইন্টিংয়ের আকাশে ১৪টা “ঘূর্ণি” বিশদে বিশ্লেষণ করেছেন। আঁকার আকারগুলো কোলমোগোরভ ল অনুসরণ করছে। এই ‘ল’ নির্দেশ করে, কীভাবে বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস জাড্য শক্তির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন মাত্রায় চলাচল করে। পেইন্টিংয়ে, সেই জাড্য শক্তি হলুদ রঙয়ের তীব্রতা দিয়ে বোঝানো হয়েছে বলে গবেষকরা মনে করেন। ঘূর্ণির মধ্যে তুলির আঁচড়ের দাগ ও তাতে যেমন জোর দেওয়া হয়েছে, তা ভৌত বিজ্ঞানের গ্যাসের গতির অপর নিয়ম ব্যাচেলর স্কেল অনুসরণ করছে। তবে ভৌতবিজ্ঞানের এই দুই ল বা নীতি, শিল্পীর মৃত্যুর কয়েক দশক পরে প্রকাশিত। অতএব তিনি জেনে বুঝে এটা আঁকেননি। পর্যবেক্ষণ, প্রাকৃতিক ঘূর্ণি থেকে তিনি এই অঙ্কনশৈলী খুঁজে পেয়েছিলেন। আর শক্তি ও হলুদ রঙের মধ্যে যোগসূত্র কাকতালীয় বলে গবেষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন প্রাকৃতিক বিশ্ব পর্যবেক্ষণ স্টারি নাইট আঁকার জন্ম দিয়েছে।
[9/27, 1:12 PM] Sourabhi Di Paralekha: মাটি ও জল দূষণ প্রভাব ফেলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে
ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিডের মতো ক্রনিক অসুখের দাপট আজ ঘরে ঘরে। তবে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে হৃদরোগ। সম্প্রতি মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা জানাচ্ছে, ২০২২ সালে গোটা বিশ্বে যে সংখ্যক মৃত্যু হচ্ছে তার সিংহভাগের নেপথ্যে রয়েছে হার্টের সমস্যা। শুধু তাই নয়, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে উঠে আসবে হৃদরোগ। চিকিৎসকদের মতে যদি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হয়, তা হলে সবচেয়ে প্রথমে নজর দিতে হবে প্রতিদিনের শরীরচর্চা এবং ডায়েটের দিকে। তবে জানেন কী কীটনাশক, ভারী ধাতু, মাটিতে মিশে থাকা মাইক্রো- ও ন্যানোপ্লাস্টিক এবং পরিবেশে মিশে থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে? নেচার রিভিউ কার্ডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এই কথাই তুলে ধরেছে। নিবন্ধে মানুষের স্বাস্থ্য বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের উপর মাটি ও জলদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব, এবং কীভাবে দূষিত পদার্থ স্বাস্থ্যর উপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে তাও আলোচনা করা হয়েছে। মাটি দূষণ, বায়ু দূষণের মতো চোখে দেখা যায়না তবে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব বায়ুর থেকে অনেক বেশি। মাটিদূষণ কমপক্ষে ৩২০ কোটি মানুষ অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০%-এর স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ের কারণ। অন্যদিকে ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ অথবা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% এমন দেশে বাস করে যে দেশগুলো বিশেষত জল দূষণ দ্বারা প্রভাবিত। গাছপালা কেটে ফেলা, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুবাহিত ধূলিকণা, অতিরিক্ত সারের ব্যবহার, শহরের অস্বাস্থ্যকর নকশা- মাটি এবং জল দূষণের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাছাড়াও কর্মক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক বস্তুর মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থ যেমন ভারী ধাতু, দ্রাবক, ডাইঅক্সিন এবং কীটনাশকের সংস্পর্শে এলে বিভিন্ন ধরনের হার্টের রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রমাণ পাওয়া গেছে মাটির পাশাপাশি জলে থাকা দূষিত পদার্থ কিছু কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে, রক্ত নালিকার প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি এবং শরীরের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। রক্ত নালি বিশেষ করে ধমনীতে ফ্যাট জমা হয়ে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
গবেষকদের মতে, হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি হ্রাস করতে মাটি এবং জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূল কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্নত জল পরিস্রাবণ পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শ হ্রাস করা, বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা, এবং উন্নতমানের ভালো কৃষি পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া। তাছাড়াও শহরাঞ্চলের নিকাশিব্যবস্থা উন্নত করা, ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করা এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত বিধিনিষেধ আরও উন্নত করার মাধ্যমে মাটি ও জল দূষণের কারণ মোকাবিলা করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থা বাস্তুতন্ত্র এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষা করবে, বিশেষ করে দূষণের কারণে কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করবে।