ভ্রূণাবস্থাতেই স্কিজোফ্রেনিয়ার বীজ রোপণ !

ভ্রূণাবস্থাতেই স্কিজোফ্রেনিয়ার বীজ রোপণ !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রাথমিক গর্ভাবস্থা সম্পর্কে বর্তমানে আমাদের জ্ঞান সীমিত । তবে, এটুকু জানা গেছে যে এই সময়ের মধ্যে ভ্রূণের যেসব জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে, তা পরবর্তীতে মানসিক সমস্যার, বিশেষ করে স্কিজোফ্রেনিয়ার মতন একটি গুরুতর সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্লিনিসিয়ান-গবেষক এডুয়ার্দো মাউরির নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এবং আক্রান্ত নয়, এমন প্রায় ২৫,০০০ মানুষের রক্তের নমুনা থেকে জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। দেখা যাচ্ছে, স্কিজোফ্রেনিয়ার বীজগুলো সবসময় বংশগতি দ্বারা নির্ধারিত নয়। কিন্তু প্রাথমিক গর্ভাবস্থা বা গর্ভাবস্থার জটিলতার কারণে অর্জিত কিছু বৈশিষ্ট্য এর কারণ হতেপারে। আঘাত বা ভাইরাল সংক্রমণের মতো ঘটনাও এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে তা বিভ্রান্তিকর বা অস্বাভাবিক চিন্তাভাবনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। সারা বিশ্বে
প্রতি ৩০০ জনের মধ্যে একজন স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সাধারণত প্রাপ্তবয়সের প্রথম দিকে এটি প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রমাণ রয়েছে যে স্কিজোফ্রেনিয়ার জন্য দায়ী শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ। শারীরবৃত্তীয় মিউটেশনগুলি শরীরের কোষগুলির (যৌন কোষ ব্যতীত) এক একটি অংশে পাওয়া যায়। যেমন, মস্তিষ্ক বা রক্তের কোষ। গবেষকরা এক্ষেত্রে দুটি জেনেটিক মিউটেশনকে চিহ্নিত করেছেন – NRXN1 এবং ABCB11। এ থেকে স্কিজোফ্রেনিয়ার বীজগুলির উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়ার যোগসূত্র এবং গর্ভাবস্থার সময়কার ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যের হদিশ পাওয়া গেছে। গবেষকরা দেখেছেন এই দুই জিনের প্রতিলিপি মুছে যাওয়াটা স্কিজোফ্রেনিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। NRXN1 জিনের মিউটেশনগুলি সাধারণত মস্তিষ্কের কোষে পাওয়া যায়। গবেষকরা এই পরিবর্তনগুলির দিকে নজর দিয়ে বুঝেছেন, এগুলি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া নয়। অন্যদিকে, ABCB11 জিনটির কাজ হল লিভার প্রোটিন এনকোড করা অর্থাৎ প্রোটিন তৈরির জন্য ডিএনএ-তে থাকা জিনগত সংকেতকে অনুবাদ করা । সাধারণভাবে স্কিজোফ্রেনিয়ার সাথে এর সম্পর্কিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গবেষকরা ABCB11 জিনের মধ্যে মুছে যাওয়া অংশ খুঁজে পেয়েছেন স্কিজোফ্রেনিয়ার আরও পাঁচটি ক্ষেত্রে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে, ‘অ্যান্টিসাইকোটিক’ বা প্রবল মানসিক রোগের ওষুধের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। মাউরি বলেন, “এটি আমাদের কাছে একদম অনাকাঙ্ক্ষিত।” গবেষকরা এই উপসংহারে পৌঁছান যে, NRXN1 এবং ABCB11 এই দুই জিনের মিউটেশনগুলি “স্কিজোফ্রেনিয়ার জেনেটিক স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ছোট কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে অবদান রাখতে পারে।” তবে, এইধরনের পরিবর্তনগুলির অবদান কতটা, তা নির্ধারণ করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। স্কিজোফ্রেনিয়া, ভ্রূণাবস্থা এবং জেনেটিক্সের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই গবেষণার বিবরণ ‘সেল জেনোমিক্সে’ প্রকাশিত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে স্কিজোফ্রেনিয়ার প্রতিরোধে কার্যকর পন্থা নিয়ে আসতে সাহায্য করবে, আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + sixteen =