মগজে চৌম্বক উত্তেজনা ভুলিয়ে দিতে পারে ঈশ্বরকেও

মগজে চৌম্বক উত্তেজনা ভুলিয়ে দিতে পারে ঈশ্বরকেও

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

মস্তিষ্কে চৌম্বকশক্তি প্রেরণের ফলে ঈশ্বরবিশ্বাস এবং কুসংস্কার- এই দুই’ই হ্রাস পেতে পারে। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ডঃ কেইস ইজুমার তত্ত্বাবধানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানাচ্ছেন, ট্র্যান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশনের দ্বারা অস্থায়ীভাবে মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ প্রকোষ্ঠকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব। পোস্টেরিয়র মেডিয়াল ফ্রন্টাল কর্টেক্স, কপাল থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে অবস্থিত মস্তিষ্কের এই অংশ, যা কিনা সমস্যা নির্ণয় ও প্রতিক্রিয়া দিতে সাহায্য করে। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল মাথার এই বিশেষ অঞ্চলটিই। পরীক্ষাতে, অংশ নেওয়া অর্ধেক সংখ্যক মানুষের উপর নকল নিম্নমানের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এবং বাকিদের মস্তিষ্কের ঐ বিশেষ প্রকোষ্ঠে প্রয়োজনীয় চৌম্বকশক্তি প্রযুক্ত হয়। এরপর, সমস্ত অংশগ্রহণকারীকেই প্রশ্ন করা হয় মৃত্যু, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং প্রবাসীদের প্রতি তাদের মনোভাব নিয়ে ।

সোশ্যাল কগ্নিটিভ অ্যান্ড অ্যাফেক্টিভ নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণার ফলাফল। দেখা যাচ্ছে, যাদের মস্তিষ্কের ঐ নির্দিষ্ট অংশগুলি সাময়িকভাবে অকেজো, ইস্বর-ফ্যারিস্তা-স্বর্গের প্রতি তাদের বিশ্বাস ৩২.৮% কম। এমনকি প্রবাসীদের ব্যাপারে তাদের সহানুভূতিও প্রায় ২৮.৫% বেশী।

The magnetic tension in the brain can be provoked by God

ডঃ ইজুমা জানাচ্ছেন, সমস্যার সম্মুখীন হয়েই মানুষ মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরে। গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, প্রকৃত সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে মস্তিষ্কের ঠিক কোন অঞ্চলটিতে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উপস্থিত বুদ্ধির মতোই, দর্শনকে অবলম্বন করে সমাধানের রাস্তাও মানুষ খুঁজে নেয় অনুরূপভাবেই।

ইজুমা আরও বলছেন, যেহেতু মানুষ মৃত্যুর অলঙ্ঘ্য প্রশ্নটির মোকাবিলা করতে গিয়েই ঈশ্বরচিন্তার শরণাপন্ন হয়, তাই মৃত্যুর কথা মানুষকে মনে করিয়ে দিতেই আমরা চেয়েছিলাম। প্রত্যাশা মতোই, যখন পরীক্ষামূলক ভাবে পোস্টেরিয়র মেডিয়াল ফ্রন্টাল কর্টেক্সকে কিছুক্ষণের জন্য স্থবির করে দেওয়া হল, তখন ধর্মের প্রতিও মানুষের আগ্রহ কমতে থাকল।

অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের লাভ-ক্ষতির দিকগুলি নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়। শয়তান ও নরক এবং ঈশ্বর ও স্বর্গ সম্বন্ধে তাদের বিশ্বাস মূল্যায়ন করেছেন তারা নিজেরাই। পরীক্ষার আগে যাতে তারা নিজেদের ধর্মীয় অবস্থানে অনড় থাকে, সেটা নিশ্চিত করেছিলেন গবেষকরা।

প্রবাসীদের লেখা দুটি মুক্ত প্রবন্ধ তাদের পড়তে বলা হয়। একটি আমেরিকার ভূয়সী প্রশংসা করে, অন্যটি চরম সমালোচনামূলক।

The magnetic tension in the brain can be provoked by God

ফলাফল বলছে, চৌম্বক উত্তেজনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া সমালোচনাটি নিয়েই। “ বহিরাগত মানুষের লেখায় নিজের দেশ সম্পর্কে কটূ কথা শুনে, তাদের মস্তিষ্কে মতাদর্শগত একপ্রকার আশঙ্কা উদ্ভূত হয়। কিন্তু মগজের ঐ বিশেষ অঞ্চলগুলি যদি নিস্তেজ হয়ে থাকে, তাহলে সেই একই প্রবাসীর প্রতিই তাদের সহানুভূতির মাত্রা বাড়ে”, জানিয়েছেন ডঃ ইজুমা।

ডঃ কলিন হলব্রুক যোগ করেন, অনুসন্ধানটি নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। এবং ঐ আশঙ্কা থেকেই দার্শনিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। যদিও, আরও বিশদ গবেষণার পূর্ণ অবসর আছে বলেই হলব্রুক মনে করছেন। গবেষণায় অগ্রসরে হয়তো ধর্মীয় হিংসায় উন্মত্ত এই পৃথিবীকে সুস্থতার কিছুটা আলো উপহার দেওয়া সম্ভব।