মঙ্গলগ্রহে মানুষের পাথানো প্রথমদিকের একটি রোভারট হলো মার্স এক্সপ্লোরেশন রেভার অপরচুনিটি। সংক্ষেপে ডাকা হতো ওপি(oppy) । ২০০৩ সালে নাসা এই রোভারকে মঙ্গলে পাঠায়। ৭ ই জুলাই ২০০৩ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল থেকে লঞ্চ হয় ডেল্টা টু রকেট। এই রকেটে চেপেই যাত্রা ওপির। প্রায় ছ’ মাস পাড়ি দিয়ে ২০০৪ এর ২৫ শে জানুয়ারি মঙ্গলের মেরিডিয়ান প্লানামে নামে ওপি। ওপির যে মূল কাজ গুলো ছিল তার মধ্যে উল্লেখ্য – মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধান, গ্রহটির পৃষ্ঠ বিশ্লেষণ আর আবহাওয়া সম্পর্কে জানা।
এই কাজের জন্যে বিজ্ঞানীরা সময় ঠিক করেছিলেন ৯০ সোল বা মঙ্গলের হিসেবে ৯০ দিন। কিন্তু অবাক করার বিষয় ওপি বেঁচে থাকলো ৫৩৫২ সোলস। মঙ্গলের হিসেবে যা প্রায় ৮ বছর আর পৃথিবীর হিসেবে ১৪ বছর ১৩৬ দিন। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের অনুমানের প্রায় ৫৫ গুন বেশি সময় ধরে কাজ করেছে এই রোভার। জীবদ্দশায় রোভার অতিক্রম করেছে মঙ্গলপৃষ্ঠের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ। উল্লেখ্য পৃথিবীর হিসেবে ধরলে হবে না। সোলার প্যানেলে চলা এই রোভারের কাছে মঙ্গলপৃষ্ঠের বিশাল ধুলোঝড় অতিক্রম করে চলাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। ২০০৫ সালের এক ধুলোঝড়ে রোভারের চাকা ডুবে যায় নরম বালিতে। সেবার ৬ সপ্তাহের চেষ্টায় রক্ষা পায় রোভার। এর পর ২০০৮ এর জুনে আবারো বিশাল ধুলোঝড়ের কবলে পড়ে সে। এই ঝড়ই সম্ভবত তার সোলার প্যানেল নষ্ট করে দেয়। ২০০৮ সালের ১০ ই জুন রোভার শেষ সিগন্যাল পাঠায় রোভারটি। নাসা এরপরেও প্রায় ৭-৮ মাস সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছিলো। অবশেষে ২০১৯ এর ১৩ ফেব্রুয়ারী ওপির যাত্রা সমাপ্তি ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে।
এই রোভার জানিয়েছিল কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন- পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে প্রথমবার খোঁজ মেলে পাললিক শিলার। এছাড়া রোভার জানায় মঙ্গলের আবহাওয়া ছিল আদ্র উষ্ণ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধানটি ছিল মঙ্গলে এক ধরণের মাটির মিনারেল আবিষ্কার করা, যা তৈরি হয়েছিল জল দিয়ে। যা থেকে মঙ্গলে জল থাকার সম্ভাবনার কথা আসে।