মঙ্গলগর্ভে হারানো জল

মঙ্গলগর্ভে হারানো জল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ মে, ২০২৫

সম্প্রতি নতুন গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, মঙ্গল গ্রহে একসময় প্রবহমান নদী ছিল। তবে কিভাবে সেখানকার জল পৃষ্ঠতল ও গর্ভের মধ্যে চক্রাকারে আবর্তিত হত সেটা এখনও এক রহস্য।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উন্নত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে জলের সঞ্চালন হার নির্ণয় করেছেন এবং মঙ্গল গ্রহে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে সৃষ্ট হ্রদ ও গভীর গর্ভস্থ জলাধারের মধ্যে সংযোগ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে মঙ্গলে গর্ভস্থ জলাধারে পৌঁছাতে জলের ৫০-২০০ বছর সময় লাগত। পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়াটি কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয় , কারণ এখানে জলের স্তর ভূগর্ভের অনেকটা কাছাকাছি। এই গবেষণা প্রথমবারের মতো মঙ্গলের আর্দ্র আবহাওয়ায় গর্ভস্থ জলের গতিবিধির একটা পরিমাণগত আনুমানিক হিসাব দেয়, যা প্রায় ৩-৪ বিলিয়ন বছর আগের ঘটনা।
গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে,এই হারিয়ে যাওয়া জল মঙ্গল গ্রহকে প্রায় ৯০ মিটার গভীর জলের স্তরে ঢেকে রাখতে পারত । যেহেতু মঙ্গলে কয়েকশো মিটার গভীর মহাসাগর থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে , তাই তার গর্ভস্থ জলের সঞ্চয় মোট জলের পরিমাণের একটা বিশাল অংশ হিসাবেই বিবেচিত হয়।
পৃথিবীর জলচক্রের সাথে মঙ্গলের জলচক্রের একটি বৈসাদৃশ্য হল, পৃথিবীর জলচক্রের জল পুনরায় বাষ্পীভূত হয়ে ফিরে আসে, কিন্তু মঙ্গলের ক্ষেত্রে এটি একমুখী প্রক্রিয়া। ভূপৃষ্ঠের জল মাটির নীচে চলে গিয়ে সেখানেই আটকে পড়ে অথবা বাষ্প হয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। কিন্তু মঙ্গলের নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ অনুপ্রবেশকে ধীর করে, কারণ গভীরতার সাথে ছিদ্রের জলের চাপ আরও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে গবেষকদের একটাই প্রশ্ন: মঙ্গলের জল তাহলে কোথায় যাচ্ছে ? তাঁরা দেখিয়েছেন যে জলের বেশিরভাগ অংশ মঙ্গলের গর্ভস্থ শিলা বা খনিজের সাথে বিক্রিয়া করে পরিবর্তিত হয়েছে অথবা বরফের মতো জমে গেছে । অর্থাৎ মঙ্গলের গর্ভে জলের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ভবিষ্যতে এই জলের রাসায়নিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বোঝার চেষ্টা করবেন কটুটুকু জল মঙ্গলের গর্ভে রয়ে গেছে এবং কতটুকু রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বদলে গেছে। তাঁরা আরও বলেছেন পরবর্তীকালে মঙ্গল অভিযানে ১ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত খনন করে প্রাচীন জলাধারের নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
নতুন বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মঙ্গল এমন একটি গ্রহ যেখানে ভূপৃষ্ঠের জল খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী ছিল। লাল গ্রহের জলবাহী প্রক্রিয়ায় সেই শক্তিশালী পুনর্ব্যবহারযোগ্য পাম্পের অভাব ছিল যা পৃথিবী নামক নীল গ্রহটিকে সক্রিয় রাখে। একবার জল মঙ্গলের গর্ভে প্রবেশ করার পর, হায়াটের ভাষায়, “সেটা কার্যত হারিয়ে গিয়েছিল।”
এই গবেষণা মঙ্গলের প্রাচীন পরিবেশ ও তার জলচক্রের গতিবিধির উপর আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয় যা ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযান ও গবেষণার জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =