মধু কী সময়ের সাথে সাথে নষ্ট হয়?

মধু কী সময়ের সাথে সাথে নষ্ট হয়?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুলাই, ২০২৪
মধু

শরীরের খেয়াল রাখতে মধুর জুড়ি মেলা ভার। থকথকে গাঢ় বাদামি রঙের এই মিষ্টি খাবারের স্বাস্থ্যগুণও অনেক। মধুর এই ঘন, আঠালো, মিষ্টতার জন্য দায়ী এর সৃষ্টিকর্তা, মানে মৌমাছিরা। ভাবতে অবাক লাগে, বর্তমানে প্রায় ৩০০ ধরনের মধু রয়েছে যা ২০,০০০-এরও বেশি প্রজাতির মৌমাছি দ্বারা উত্পাদিত। বিজ্ঞানীরা বলেন মধুর গঠন নির্ভর করে মৌমাছির ধরনের উপর। ফুলের মধু সংগ্রহের পর, মৌমাছিরা এই মধুতে থাকা সুক্রোজকে অত্যন্ত ঘনীভূত সরল শর্করায় পরিণত করে। যদিও মধুর প্রধান উপাদান শর্করা, তবে এতে অন্যান্য পদার্থও রয়েছে, যেমন- এনজাইম, খনিজ, ভিটামিন এবং জৈব অ্যাসিড। মধুতে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক যৌগও রয়েছে, যা ফোলাভাব কমাতে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই যৌগগুলোর উপরেই নির্ভর করে মধুর ঔষধি গুণাবলী।
মৌমাছিরা যখন মধু তৈরি করে তখন প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ একত্রিত হয় যা মধুর প্রাকৃতিক মিষ্টত্বকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও মধুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার শর্করা। এই শর্করা মধুকে হাইড্রোস্কোপিক করে তোলে, অর্থাৎ এটি পরিবেশ থেকে আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে, এমনকি পার্শ্ববর্তী মাইক্রোবিয়াল কোশ থেকেও জল শোষণ করে। মধুতে জলের পরিমাণ খুবই কম, ফলে জীবাণুরা বাড়তেও পারে না। মধুতে উপস্থিত গ্লুকোনিক, অ্যাসিটিক, ফর্মিক এবং সাইট্রিক অ্যাসিড মধুকে কফির চেয়ে আরও বেশি অম্লীয় করে তোলে। আর তা বেশিরভাগ জীবাণু সহ্য করতে পারে না। এছাড়াও মধুতে রয়েছে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া মধুর ওপরে কোনো পাতলা আস্তরণও তৈরি করতে পারে না। মধুতে উপস্থিত এই সমস্ত রাসায়নিক এটিকে জীবাণুদের থেকে রক্ষা করে। মধুর নষ্ট হওয়া রোধ করে। তবে মধু দীর্ঘ সময়ের জন্য খাওয়ার উপযুক্ত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এরও পরিবর্তন ঘটে। মধুর উপাদান কেলাসন, ফার্মেন্টেশন, অক্সিডেশন এবং তাপের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তন অনেকসময় মধুর ধরন অর্থাৎ হালকা বা গাঢ় রঙ, এর উত্স, বা অঞ্চলের উপরও নির্ভর করে যা আবার ঋতু এবং চারা গাছের সাথে সম্পর্কিত। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তপ্ত বা সংরক্ষণ করা হলে, মধুতে একধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা চিনিকে ক্যারামেলাইজ করে এবং এটিকে বাদামী রঙের করে তোলে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, মধুর সংবেদনশীল এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়। এই সব কারণে, মধুর হ্যান্ডলিং এবং প্যাকেজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা মধু যদি ন্যূনতমভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং একটি সিল করা পাত্রে সংরক্ষণ করা হয় তবে এটি ‘চিরকাল’ স্থায়ী হতে পারে। একইভাবে, পাস্তুরিত মধু কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু যেহেতু এতে কিছু এনজাইম এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ থাকে না, তাই সিল করা বা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে এটি জীবাণুর দ্বারা নষ্ট হতে পারে।
তবে মধু কী সত্যিই মধুর? রোজ মধু খেলে সুস্থ থাকা যায় এই ধারণা আজ বদলেছে। গবেষণা বলছে মধু থেকে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। তাই শিশু হোক বা বয়স্ক, নিয়মিত মধু খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =