
দীর্ঘমেয়াদী প্রচুর মদ্যপান, কেবলমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। মস্তিষ্কর গুরুত্বপূর্ণ বর্তনীগুলিরও ক্ষতি করে ।এমনকি মস্তিষ্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বাভাবিকের তুলনায় নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এমন সব লক্ষণ মদ্যপান প্রত্যাহারের মাসখানেক পরেও দেখা গেছে। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল মদ্যপানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের এক নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট প্যাট্রিশিয়া জানাক বলেছেন, “মাদকাসক্তিতে ভুগতে থাকা মানুষের মধ্যে যে মানসিক পরিবর্তন ঘটে, তার জন্য আমাদের কাছে একটি নতুন মডেল আছে। এইসব মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা অনুভব করেন। অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত মদ্যপান তাদের খারাপ সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী। আমাদের এমন একটি প্রাণী মডেল দরকার ছিল, যাতে আমরা মস্তিষ্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী মদ্যপানের কুপ্রভাব ভালোভাবে বুঝতে পারি”। গবেষক ইয়িফেং চেং, জানাকের ল্যাবে মস্তিষ্কের উপর মদ্যপানের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন। তিনি পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রাণীগুলিকে টানা এক মাস যাবৎ অত্যধিক মদ্যপান করতে দেন। এরপর প্রায় তিন মাস, তাদের মদ্যপান থেকে বিরত রাখেন। এর পর একটি পুরস্কারভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ পরীক্ষায় ইঁদুরগুলিকে অংশ গ্রহণ করানোর সিদ্ধান্ত নেন চেং। সেখানে দু দল ইঁদুরের মধ্যে একটি দল আদৌ মদ খায়নি। পুরস্কার পাওয়ার জন্য, তাদের বলা হয় দুটি পুরস্কারভিত্তিক যন্ত্রের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে। দুটি পুরস্কারভিত্তিক যন্ত্রের মধ্যে একটিকে চাপলে অন্যটির তুলনায় বেশি পুরস্কারের সম্ভাবনা রাখা হয়। ইঁদুরগুলি সহজেই শিখে যায়, কোন যন্ত্রটি বেশি পুরস্কার দেয়। কিন্তু গবেষকরা এই বিষয়টিকে আরও জটিল করে দেন। কয়েক মিনিট পর যন্ত্রদুটির মধ্যে কোনটিতে পুরস্কারের সম্ভাবনা বেশি থাকবে, তা বারবার বদলাতে থাকেন । এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়ার জন্য, ইঁদুরদের দ্রুত আচরণ বদলাতে হতো। এই কঠিন সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজন স্মৃতি এবং কৌশল। মদের সম্মুখীন হওয়া ইঁদুরগুলি রীতিমতো খারাপ ফল করে। গবেষকরা মনে করেন, এর আগে মদ্যপান এবং প্রাণী সংক্রান্ত পরীক্ষায় যেসব কাজ দেওয়া হত সেগুলো অত্যন্ত সহজ ছিল । “আমাদের দেওয়া এই পরীক্ষাটি কিন্ত বেশ কঠিন ছিল এবং সুরা-প্রভাবিত ইঁদুরগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিল না”, জানক বলেন। “যখন সঠিক উত্তরটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছিল, তখন মদের প্রভাব বর্জিত ইঁদুরগুলি দ্রুত এবং সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল। তারা তুলনায় বেশি কৌশলী ছিল। তাদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পাই, , মদ্যপান থেকে বিরত ইঁদুরগুলির সিদ্ধান্ত-সম্পর্কিত স্নায়ু সংকেতগুলি শক্তিশালী ছিল”। গবেষকরা আচরণগত সমস্যাগুলিকে, মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অপরিহার্য ডর্সোমিডিয়াল স্ট্রিয়াটাম নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের ক্রিয়াকর্মে নাটকীয় পরিবর্তনের সাথে যুক্ত করেছেন। মদ্যপান স্নায়ু বর্তনীগুলির ক্ষতি করে, ফলে মদ্যপান-প্রভাবিত ইঁদুরগুলির তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কার্যকরতা কমে যায়। মদ্যপানের প্রভাব যে কতদিন ধরে বৌদ্ধিক এবং স্নায়বিক কার্যকরতাকে ক্ষুণ্ণ করে, সেটি বিস্ময়কর ! জানাক বলেন, “এ থেকে আমাদের বুঝতে সুবিধে হয়, কেন মাদকাসক্ত মানুষের মদ্যপানের পুনরাবৃত্তির হার এত বেশি”। দলটি পুরুষ ইঁদুরগুলোর মধ্যে আচরণগত ও স্নায়বিক সমস্যা খুঁজে পায়। অবশ্য স্ত্রী ইঁদুরগুলিও যে মদের প্রভাব থেকে মুক্ত তা নয়। তবে মদ্যপানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মস্তিষ্কের কার্যকরতায় পুরুষ এবং স্ত্রী ইঁদুরের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। গবেষকরা ভবিষ্যতে পরীক্ষা করে দেখতে চান, মদ্যপান-প্রভাবিত ডর্সোমিডিয়াল স্ট্রিয়াটামের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত মস্তিষ্কের অন্যান্য এলাকাতেও কী এবং কীভাবে প্রভাব পড়ে!