মনের চিকিৎসায় স্মার্ট ফোন

মনের চিকিৎসায় স্মার্ট ফোন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ আগষ্ট, ২০২৫

স্মার্টফোনগুলি সাধারণত ঘুম, দৈনন্দিন পদক্ষেপ এবং হৃদস্পন্দনের মতো শারীরিক স্বাস্থ্য সূচকগুলি অনুসরণ করতে পারে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে এটি মানুষের মনের ঘরের খবরও রাখছে। প্রাথমিকভাবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়েও ইঙ্গিত দিতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা JAMA Network Open জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে স্মার্টফোনের সেন্সর ব্যবহার করে মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস গোপনে পর্যবেক্ষণ করে মানসিক অসুস্থতার সম্ভাব্য ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
২০২৩ সালে ৫৫৭ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর ১৫ দিনের এক গবেষণায় স্মার্টফোন সেন্সরের মাধ্যমে ঘুমের ধরন, শারীরিক নড়াচড়া, ফোন ব্যবহারের সময় ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার মধ্যে কিছু মিল রয়েছে, যেমন—বাড়িতে দীর্ঘ সময় থাকা, দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা, ফোন চার্জ কম দেওয়া ইত্যাদি। এসব আচরণ “পি-ফ্যাক্টর” নামে পরিচিত একটি সাধারণ মানসিক অসুস্থতার মাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা বিভিন্ন ধরনের মানসিক ব্যাধিকেও সংযুক্ত করে।
গবেষণার প্রবীণ লেখক প্রফেসর এডেন রাইট জানান, কিছু আচরণ—যেমন কম ফোন কল করা বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কমে যাওয়া—সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা শারীরিক অসুস্থতার মতো সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাঁর মতে,দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলে হয়তো বড় ধরনের মানসিক অসুস্থতা স্মার্টফোন সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।
তবে প্রচলিত ডিজিটাল সাইকিয়াট্রি সাধারণত DSM-5 ম্যানুয়ালের নির্ধারিত রোগনির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে। যা সুনির্দিষ্ট কিছু আচরণ শনাক্তকরণেই সীমাবদ্ধ। কারণ, মানসিক রোগ প্রায়ই নানা ধরনের উপসর্গের মিশ্রণ, যা একাধিক মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে । ফলে কোন নির্দিষ্ট রোগ কোন আচরণের জন্য দায়ী, তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়।
গবেষণার প্রধান লেখক প্রফেসর হুইটনি রিংওয়াল্ড জানান, এসব তথ্য আমাদের সাহায্য করে বুঝতে যে, বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি কিভাবে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলে। যেহেতু মানসিক অসুস্থতা প্রায়ই ধীরে ধীরে মনে প্রভাব ফেলে, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর এবং সময়মতো শনাক্ত করাও অত্যন্ত জরুরি।

রাইটের মতে, প্যাসিভ সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি গুরুতর কিছু হওয়ার আগে মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে ফলাফল হবে আরও ভালো। চিকিৎসা ব্যয় কমবে এবং মানসিক রোগ নিয়ে সামাজিক কলঙ্কবোধ হ্রাস পাবে। এই নতুন প্রযুক্তি মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

সূত্র: “Passive Smartphone Sensors for Detecting Psychopathology” by Whitney R. Ringwald, Grant King, et.al ; JAMA Network Open (3.7.2025).
DOI: 10.1001/jamanetworkopen.2025.19047

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =