
২০২৫ সালের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে আটটি ভিন্ন ধরনের মনোরোগের পিছনে একই ধরনের জিনগত কারণ কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক এই গবেষণায় দেখিয়েছেন যে কিছু নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয় থাকে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২০১৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল প্রথম ১০৯টি জিন চিহ্নিত করেন, যেগুলোর বিভিন্ন সংমিশ্রণ আটটি রোগের সঙ্গে জড়িত। এই রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, অটিজম, এ ডি এইচ ডি (অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপার আক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ), স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার, টুরেট সিনড্রোম, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (OCD), এবং অ্যানোরেক্সিয়া। এই গবেষণার ফলে বোঝা যায় কেন এই রোগগুলো প্রায়ই একসাথে দেখা যায় এবং কেন একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এগুলোর উপস্থিতি বেশি।
গবেষক হেইজং উন এবং তার দল এই ১০৯টি জিনের মধ্যে থাকা প্রায় ১৮,০০০টি জিনগত বিকল্প পরীক্ষা করে দেখেন। এই বিকল্পগুলোকে মানুষের স্নায়ুকোষের পুর্বসূরি কোষে (প্রিকারসার সেল) বসিয়ে তাদের বিকাশের ধারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে তাঁরা ৬৮৩টি বিকল্প জিন শনাক্ত করেন যেগুলো জিন নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে ইঁদুরের স্নায়ুকোষে এই বিকল্প জিনগুলির কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, যে জিনের বিকল্পগুলো একাধিক মানসিক রোগের সঙ্গে যুক্ত সেগুলো অন্যান্য জিন-ভিত্তিক বিকল্পের তুলনায় অনেক বেশি দুই বা ততোধিক প্রোটিন সংযোগের সাথে সম্পর্কিত এবং বেশি সংখ্যক স্নায়ুকোষে সক্রিয়। এ কারণে এই জিনের বিকল্প গুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
উন বলেন, অতীতে একটি জিন দ্বারা একাধিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশকে চিকিৎসায় বাধা হিসেবে দেখা হতো, কারণ এটি মানসিক রোগগুলোর শ্রেণিবিন্যাস জটিল করে তোলে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, যদি এই সাধারণ জেনেটিক কারণগুলোর কার্যপ্রণালী বোঝা যায়, তাহলে একাধিক মানসিক রোগের জন্য একক চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রতি আটজনের একজন মানসিক রোগে ভোগেন। তাই এই গবেষণা মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।