
বিগত কয়েক দশকে অনেক কিছুর বদল ঘটেছে, তার মধ্যে একটি হলো মশার প্রকৃতির পরিবর্তন। যেমন ধরুন, মশামারক ওষুধে মশারা মরছে কম। তারা তাদের সংবেদনশীলতা আগের থেকে অনেক উন্নত করে ফেলেছে। রক্ত শোষণের ক্ষমতা, আগের থেকে অনেক বেড়েছে। আগে যে সব জায়গায়, মশার উপদ্রব ছিল না, এখন সেই সমস্ত জায়গাতেও প্রবল মাত্রায় মশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে, তারা বেশ ভালই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। অতিরিক্ত গরম কিংবা অতিরিক্ত ঠান্ডা সব কিছুকেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বংশবিস্তার করে চলেছে দিব্যি।
সমস্যাটা হল, কিছু মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া। এগুলো মানুষের জন্য জীবন সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান বলছে, এই রোগে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে। মশা বাহিত রোগ কমাতে গেলে, মশার সংখ্যা কমাতে হবে সবার আগে।
অস্ট্রেলিয়ার কিছু বিজ্ঞানী নতুন এক প্রক্রিয়ায় মশার সংখ্যা কমানোর উপায় বার করেছেন। এ যেন কিছুটা ‘মশা মারতে কামান দাগার’ই মতন অথবা বলা যেতে পারে, ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র মত।
তাঁরা, ল্যাবে কিছু পুরুষ মশার শুক্রানুর মধ্যে বিষাক্ত প্রোটিন চালান করবেন। এই প্রক্রিয়াকে তারা ‘টক্সিক মেল টেকনিক’ নামকরণ করেছেন। ফলত, প্রজননের সময়, এই বিষাক্ত পুরুষ মশাগুলির সান্নিধ্যে আসা স্ত্রী মশাগুলি, মিলনের পরেই মারা যেতে পারে। স্ত্রী মশা গুলিকে মূলত লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু করার কারণ, যা কিছু মশাবাহিত রোগ, তা এই স্ত্রী মশা কামড়ের জন্য হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাক কুয়ারি ইউনিভার্সিটির, বিজ্ঞানী স্যাম বিচ বলেছেন, উপকারী প্রজাতির ক্ষতি না করে এই প্রক্রিয়া, কার্যকর কীটনাশকের মতনই দ্রুত কাজ করতে পারে। কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে, এই উদ্ভাবন, সুস্থ এবং সাসটেইনেবল ভবিষ্যত এর দরজা খুলে দেবে।
প্রথম পরীক্ষার জন্য, দুই সপ্তাহে বেড়ে ওঠা মাছিদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। ফল যথেষ্ট আশানুরূপ ছিল। বিষাক্ত পুরুষদের সাথে প্রজননের পর, স্ত্রী মাছিদের আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। গবেষক ম্যাকিয়েজ মাসেলকো, বর্তমানে মশাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন।
তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে, মশাগুলিতে জিনগত কিছু পরিবর্তনের দরকার রয়েছে। যাতে প্রজননের সময়, তারা কেবলমাত্র বিষাক্ত শুক্রাণু গুলিই ব্যবহার করে। ‘কন্ডিশনাল এক্সপ্রেশন’ অর্থাৎ শর্তগত অভিব্যক্তি কৌশল এর মাধ্যমে এই জিনগুলিকে ইচ্ছামত ব্যবহার এবং অব্যবহার করতে পারে। প্রয়োজনে, জৈবিক ট্রিগার দিয়ে জিনগুলি পরিবর্তন করা যায়। শুধু তাই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের পুরুষগুলিও যাতে এমন ধরনের বিষাক্ত শুক্রাণু নিয়ে জন্মাতে পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। জিনগত দিক থেকে পরিবর্তিত এই বিষাক্ত মশা অনেক সংখ্যায় ছাড়তে পারলে মশা মারার এই প্রচেষ্টা কার্যকর হবে।
নেচার কমিউনিকেশন্স দ্বারা প্রকাশিত, পিয়ার রিভিউ জার্নাল এ গবেষণাটি বর্ণনা করা হয়েছে।