কীটনাশক-প্রতিরোধী মশার দৌরাত্ম্যের মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই খোঁজে এবার এসেছে এক অভিনব জৈবপ্রযুক্তি-“সুগন্ধি ছত্রাক”। আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মেটারাইজিয়াম অ্যানিসোপ্লাই নামক এক প্রজাতির ছত্রাককে জিনগত প্রকৌশলে এমনভাবে বদলে দিয়েছেন যে এটি মশার কাছে আকর্ষণীয় ঘ্রাণ ছড়ায়। গবেষক রেমন্ড সেন্ট লেজার জানান, “মশারা ফুলের মধু খুঁজতে ঘ্রাণ অনুসরণ করে। আমরা সেই প্রবৃত্তিকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছি।” ছত্রাকটিতে যুক্ত করা হয়েছে এমন জিন, যা লংগিফোলিন নামের এক প্রাকৃতিক সুগন্ধি যৌগ তৈরি করে। এটি ফুল-পাতার ঘ্রাণে পাওয়া যায় এবং মশাকে টানে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ছত্রাকের বীজাণু (স্পোর) থেকে নিঃসৃত ঘ্রাণে মশারা আকৃষ্ট হয়ে আসে। সেই সংস্পর্শে এসে তারা সংক্রমিত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যায়। মাত্র এক সপ্তাহে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ মশা ধ্বংস করা গেছে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় এমনটাই দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন “জীববৈজ্ঞানিক মশা নিয়ন্ত্রণ”। এ এক পরিবেশবান্ধব বিকল্প, যা কেবল মশাকেই লক্ষ্য করে, অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষতি করে না। প্রচলিত কীটনাশকের ব্যর্থতার যুগে এই পদ্ধতি হতে পারে এক বৈপ্লবিক দৃষ্টান্ত। গবেষক দল জানিয়েছে ছত্রাকটি মানুষের জন্য নিরাপদ। লংগিফোলিন নিজেই সুগন্ধিতে ব্যবহৃত এক অ-বিষাক্ত যৌগ। তবে তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ফলাফল এখনও ল্যাবরেটরি পর্যায়ে সীমিত। বাস্তব পরিবেশে একই সাফল্য মিলবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত নয়। প্রাকৃতিক বাতাস, আলো ও জীববৈচিত্র্য এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই পরবর্তী ধাপে শুরু হবে মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা। আরও বড় সুবিধা হলো এর কম উৎপাদন খরচ। ধান-খইল, গমের খইল বা কৃষিজ অপচয় পদার্থেও সহজে এটি চাষ করা যায়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর দশ লক্ষ মানুষ মশাবাহিত রোগে প্রাণ হারান। এই প্রেক্ষাপটে “সুগন্ধি ছত্রাক” শুধু এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের এক সম্ভাব্য বিপ্লব। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, “এটি একমাত্র সমাধান নয়, বহুমাত্রিক পদ্ধতির একটি অংশ।” জৈবপ্রযুক্তি, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সচেতনতার সমন্বয়েই মশা-যুদ্ধে সাফল্য আসবে।
সূত্র : “This Genetically Engineered Fungus Could Help Fix Your Mosquito Problem”; The Newyork Times; By Jason P. Dinh;
Nov. 1, 2025
