মস্তিষ্ক তাজা রাখার কৌশল

মস্তিষ্ক তাজা রাখার কৌশল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ অক্টোবর, ২০২৫

বয়সে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। কিন্তু দৈনন্দিন ছোটো-খাটো কিছু অভ্যাস মস্তিষ্ককে তরুণ, সতেজ এবং তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে দুই বছরের একটি গবেষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ সহ দৈনন্দিন অভ্যাসগুলি কিভাবে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার সঙ্গে যুক্ত মানসিক অবনতি কমাতে সাহায্য করে।

এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ৬০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ২,১১১ জন, যাদের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ঝুঁকি ছিল। তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়—এক গ্রুপ পেল কাঠামোবদ্ধ প্রোগ্রাম, আরেক গ্রুপ স্ব-নির্দেশিত প্রোগ্রাম। কাঠামোবদ্ধ প্রোগ্রামে ৩৮টি ছোট গ্রুপ মিটিং, স্পষ্ট লক্ষ্য, মস্তিষ্কের ব্যায়াম, সামাজিক যোগাযোগ, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং ব্যায়ামের ধরন (এ্যারোবিক, রেজিস্ট্যান্স ও স্ট্রেচিং) রাখা হয়। অন্যদিকে স্ব-নির্দেশিত প্রোগ্রাম বানানো হয়েছিল সাধারণ উৎসাহের উপর নির্ভর করে।

খাদ্যাভ্যাসে সবজি, বেরি, শস্য, বিন, বাদাম, অলিভওয়েল ও মাছকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। এই খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য ছোট খাটো অভ্যাস মিলে মস্তিষ্কের স্মৃতি, পরিকল্পনা ক্ষমতা, মানসিক গতিশীলতা এবং নির্বাহী দক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ফলাফল থেকে দেখা যায়, কাঠামোবদ্ধ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের সামগ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা প্রতি বছরে ০.২৪৩ বিচ্যুতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে স্ব-নির্দেশিত গ্রুপের বৃদ্ধি ছিল ০.২১৩। নির্বাহী ক্ষমতাও কাঠামোবদ্ধ প্রোগ্রামে বেশি উন্নতি দেখিয়েছে। তবে, স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়নি।

গবেষকরা মনে করেন, কোনো একক অভ্যাসই যাদুকরী হাতিয়ার নয়। বরং একাধিক দিক একসাথে অনুসরণ করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিশেষভাবে, বার্ধক্যজনিত রোগাক্রান্তদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করা। সামান্য পরিবর্তন, পুনরাবৃত্তি এবং উপযুক্ত সমর্থনের সঙ্গে মিলিয়ে, মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন তরুণ ও সক্রিয় রাখা সম্ভব। তার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, মানসিক ব্যায়াম, সামাজিক সংযোগ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসব অভ্যাসকে দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সত্যি বলতে, ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই বড় পরিবর্তন আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্য্য সহকারে অভ্যাস করলে বার্ধক্যজনিত মানসিক অবনতি ধীর করা যায়, মস্তিষ্ককেও দীর্ঘদিন সতেজ ও তীক্ষ্ণ রাখা সম্ভব।

 

সূত্র : Structured vs self-Guided Multidomain lifestyle intervention for Global cognitive Function.The US Randomized clinical Trial by Laura D. Baker, Rachel A. Whitmer, et.al;(28.07.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − two =