
৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পাহাড়ের অগ্নুৎপাতে পম্পেই শহর ধ্বংস হয়েছিল। তারই কাছাকাছি আরেকটি শহর হারকুলানিয়ামও একইভাবে ধ্বংস হয়েছিল । ৯৬০ সালে হারকুলানিয়ামের কলেজিয়াম অগাস্টালিয়ামে পাওয়া এক ব্যক্তির কঙ্কালের মাথার খুলি পরীক্ষা করে জানা যায় তার মস্তিষ্ক কাচে পরিণত হয়েছে। ইতালির বিজ্ঞানী পিয়ের পাওলো পেট্রোনের মতে, সাধারণত এসব নমুনা নরম হয় বা মমির মতো শুকিয়ে যায়। কিন্তু হারকুলানিয়ামে গবেষণা করার সময়, তিনি খুলির ভেতরে কালো ও চকচকে কিছু জিনিস দেখতে পান। পরে তিনি বুঝতে পারেন, এগুলো কাচে পরিণত হওয়া মস্তিষ্কের অংশ।গবেষণায় এই কলাতে স্নায়ুকোষের চিহ্ন পাওয়া গেছে যেগুলি মূলত বার্তা পাঠানো ও গ্রহণের জন্য জটিল শাখাপ্রশাখা তৈরি করে। গবেষকরা ৬ অক্টোবর প্লস ওয়ান জার্নালে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। পেট্রোনে ও অন্যান্য গবেষকরা স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ‘ব্যবহার করে ওই তরুণের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের কাচে পরিণত অংশ পরীক্ষা করেন। তারা নলাকার গঠন ও কোষের অংশ দেখতে পান যেগুলি নিউরনের আকারের সাথে মেলে।গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরা স্তরযুক্ত কলা বা মাইলিন খুঁজে পান। মাইলিন হলো এক ধরনের চর্বিযুক্ত পদার্থ, যা স্নায়ুর সংকেত দ্রুত পাঠাতে সাহায্য করে। নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন অনেক সময় কোনো তরল পদার্থ যেমন গলে যাওয়া বালি, খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কাচে পরিণত হয় । একে ভিট্রিফিকেশন বলা হয় ।এভাবেই জানালা ও কাচের কাপ বানানো হয়। প্রকৃতিতেও এটি ঘটতে পারে। যেমন বজ্র বালিময় মরুভূমির ওপর পড়লে ফুলগুরাইট নামে কাচের টুকরো তৈরি হয় ।তবে, এই ঘটনা প্রকৃতিতে তুলনামূলকভাবে বিরল ।বিজ্ঞানীরা এর আগে কখনো মানুষের শরীরের নরম অংশ কাচে পরিণত হতে দেখেননি। এ ছিল একদম নতুন আবিষ্কার। ভূতাত্ত্বিক ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ গুইডো জিয়োর্ডানো এবং তাঁর সহকর্মীরা ডিফারেনশিয়াল স্ক্যানিং ক্যালোরিমেট্রি নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে কাচে পরিনত হওয়া মস্তিষ্কের অংশকে আবার গরম করেন। এতে তাঁরা বুঝতে পারেন, এটি ৫১০° সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপে জমাট বেঁধে কাঁচে পরিণত হয়েছিল। গবেষকরা মনে করেন, আগ্নেয়গিরির গরম ছাই, পাথর ও গ্যাস একসাথে এসে হারকুলানিয়াম শহর ঢেকে ফেললেও, তা কিন্তু মস্তিষ্ককে কাচে পরিণত করেনি। কারণ, এমন আগ্নেয়গিরির ছাই সাধারণত ৪৬৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হয়ে, এত দ্রুত ঠান্ডা হয় না। বিজ্ঞানীদের ধারণা খুব গরম একধরনের ছাইয়ের মেঘ ওই যুবকের শরীরে আঘাত করে দ্রুত হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল। এতেই শরীরের অংশ দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কাচে পরিণত হয়। পরে, তার দেহ পুরু ভস্ম স্তরের নিচে চাপা পড়ে। গবেষকদের মতে, তার মাথার খুলি মস্তিষ্কের অংশকে রক্ষা করে। খুলির হাড় গরম ছাইয়ের সরাসরি প্রভাব থেকে মস্তিষ্ককে বাঁচিয়েছে।