মস্তিষ্কের মানচিত্রন

মস্তিষ্কের মানচিত্রন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের চারপাশের পরিবেশের মানচিত্র তৈরি করে। সেটি আমাদের পারিপার্শ্বিক বিশ্বকে বুঝতে, চিন্তা করতে, স্মরণ করতে এবং পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। এই মানচিত্রগুলি কোনো অট্টালিকার সঠিক তলায় আমাদের গন্তব্য ঘরটি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এরই দৌলতে আমরা ভুল তলায় উঠেছি কিনা তা নির্ধারণ করতে পারি। এই মানচিত্র গঠনের জন্য যে নিউরনগুলি কাজ করে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে স্নায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু জানেন। যেমন নির্দিষ্ট একটি ভৌগোলিক স্থানে থাকাকালীন কোন কোন কোষগুলি সক্রিয় হয়। কিন্তু আমরা যখন শিখি তখন আমাদের মস্তিষ্ক কিভাবে এই মানচিত্রগুলি তৈরি করে তা এখনও রহস্য।
স্প্রাস্টন (Spruston) ল্যাবের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল আবিষ্কার করেছে যে একটি প্রাণী যখন দুটি অনুরূপ পথে (যেমন, একটি অট্টালিকার বিভিন্ন তলা) চলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তখন মস্তিস্কর স্মৃতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চল হিপোক্যাম্পাসের নিউরনগুলি বিভিন্ন পথের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে। অবশেষে, মস্তিষ্ক এই অনুরূপ পথগুলির সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা মানচিত্র তৈরি করে, যার ফলে প্রাণীটি এই দুটি পথের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়।গবেষকরা একটি বিশেষ অনুবীক্ষণ ব্যবহার করে অনেকগুলি ইঁদুরের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যখন তারা দুটি ভিন্ন পথে চলাচল করা শিখছিল। একটি পথে কাছাকাছি তাদের জন্য একটি পুরস্কার রাখা ছিল এবং অন্যটিতে রাখা ছিল দূরে। গবেষকরা দেখলেন, সবগুলি ইঁদুর একইভাবে পথ নির্ধারণ করা শিখেছে। তারা বুঝেছিল যে প্রতিটি পথে কেবল একটিই পুরস্কার আছে। তারা এও বুঝতে পেরেছিল যে, কোন পথে সেটা দূরে এবং কোন পথে সেটা কাছে রাখা ছিল।
শেখার শুরুতে, দুটি পথের ক্ষেত্রেই মস্তিস্কের বিভিন্ন নিউরনের ক্রিয়াকলাপ প্রধানত একই রকম ছিল। কেবল ভিন্ন সংকেত এবং পুরস্কারের অবস্থানগুলিকে বোঝার জন্য সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। সময়ের সাথে সাথে, বিভিন্ন চলনপথকে প্রতিনিধিত্বকারী নিউরনগুলির ক্রিয়াকলাপ আরও আলাদা হতে শুরু করেছিল। শেখার শেষে, এই নিউরনগুলির ক্রিয়াকলাপ সম্পূর্ণরূপে আলাদা ছিল, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের লুকানো তথ্য বা প্রাথমিকভাবে অজানা তথ্যগুলিকে সংকেত বদ্ধ করার মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্ক স্পষ্ট মানচিত্র তৈরি করেছিল যা প্রাণীগুলিকে দুটি চলনপথের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম করে। গবেষকরা দেখেছেন যে নির্দিষ্ট অনেক কোষ রয়েছে – তারা সেগুলিকে “স্টেট সেল” নাম দিয়েছেন – যারা পরিবেশের লুকানো তথ্য বের করে এই পার্থক্য করতে সক্ষম হয়।
অট্টালিকার যে উপমাটি দিয়েছি তার ক্ষেত্রে, মস্তিষ্ক প্রথমে অট্টালিকার সব তলাকে সমানভাবেই উপস্থাপন করে। কিন্তু কয়েক দিন পরে, আমরা তলাগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে শিখি। আমাদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন তলার জন্য বিভিন্ন মানচিত্র তৈরি করে, যার মধ্যে লুকানো বা প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকে। যেমন লিফটের ভিতরে দেখানো নম্বরটি যা আমরা বাইরে আসার পরে আর দেখতে পাই না। এটি আমাদের তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করে। বাস্তব জগতে এই প্রক্রিয়াটি একটি অরণ্য, মাঠ বা শহরের একই রকম দেখতে পথগুলিকে ভিন্ন করতে প্রাণীদেরকে সাহায্য করে।
মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে তা ভালোভাবে বুঝতে পারলে গবেষকরা অ্যালঝাইমারের মত স্মৃতিভ্রংশ রোগের জন্য আরও ভাল চিকিৎসার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করতে পারবেন। এমন সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারবেন যা জীব মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে সক্ষম হবে।
তথ্যসূত্রঃ https://www.sciencedaily.com/releases/2025/02/250212134710.htm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =