ঠিক ক্রিসমাসের আবহে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি কেড়েছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের গভীরে জ্বলে ওঠা এক আশ্চর্য নক্ষত্ররাজি। পৃথিবী থেকে প্রায় ২,৭০০ আলোকবর্ষ দূরে জ্বলে উঠেছে এই বিশাল নক্ষত্র গঠনকারী অঞ্চল, যার আকৃতি আশ্চর্যজনকভাবে একটি ক্রিসমাস ট্রি-র মতো। এই অনন্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কাঠামোটির নাম NGC 2264, যা একদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, অন্যদিকে চোখধাঁধানো এক মহাজাগতিক শিল্পকর্ম।
এই অঞ্চলে চলছে তারা জন্মের নিরবচ্ছিন্ন উৎসব। বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ—যেগুলো ভবিষ্যৎ তারার কাঁচামাল—ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে নতুন আলোর জন্ম দিচ্ছে। সেই নবজাত তারাগুলো যখন জ্বলে ওঠে, তাদের শক্তিশালী বিকিরণে আশপাশের গ্যাস লাল আভায় দীপ্ত হয়। এই দীপ্তিময় অঞ্চলগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন এমিশন নেবুলা – যেন মহাকাশের ঝুলন্ত রক্তিম অলংকার।
আবার কোথাও ঘন ধূলিমেঘ আলো শোষণ করে তৈরি করছে রহস্যময় অন্ধকার ছায়া। সেই অন্ধকারের ফাঁকেই কিছু ধূলিকণা তারার আলো প্রতিফলিত করে ছড়িয়ে দিচ্ছে কোমল নীল আভা। একেবারে যেন নীল আলোয় মোড়া ক্রিসমাসের ঝলমলে সাজ।
NGC 2264-এর অন্তরে রয়েছে একটি উজ্জ্বল ও পরিবর্তনশীল তারা—এস মনোসেরোটিস। এই তারার আলো সময়ের সঙ্গে বাড়ে কমে এবং তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নীলাভ কুয়াশা পুরো অঞ্চলটির দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। এর ঠিক উপরে তরুণ তারাদের একটি ত্রিভুজাকার বিন্যাস গড়ে উঠেছে, যা আকাশ পর্যবেক্ষকদের কাছে পরিচিত ‘ক্রিসমাস ট্রি স্টার ক্লাস্টার’ নামে।
মহাজাগতিক গাছটির চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে কোন এক নীহারিকা / গ্যাস ও ধূলির এক বিশাল শঙ্কু, যাকে পাশের তারাদের প্রচণ্ড বিকিরণ ধীরে ধীরে খোদাই করেছে। আর তার নীচে বিস্তৃত ফক্স ফার নীহারিকা, যার জটিল বুননে আলো ও অন্ধকারের মেলবন্ধন তৈরি করেছে এক মহাজাগতিক শিল্পকর্ম।
দূরবীক্ষণে এই অঞ্চল আকাশে প্রায় দেড় ডিগ্রি জুড়ে বিস্তৃত—তিনটি পূর্ণিমার চাঁদের সমান। কিন্তু এই আপাত ছোট বিস্তারের আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রায় ৮০ আলোকবর্ষ দীর্ঘ এক বিশাল নক্ষত্র-নার্সারি। এই মহাজাগতিক ক্রিসমাস ট্রি আমাদের এক নতুন চেতনার জন্ম দিল। মহাবিশ্ব কেবল শূন্যতার নাম নয়, এটি আলো, জীবনের জন্ম ও অপার সৌন্দর্যের এক চিরন্তন উৎসব।
সূত্র : A Cosmic Christmas Tree Lights Up the Milky Way By SciTechDaily.com 25th December, 2025.
