মহাজাগতিক সংযোগ ও জীবাণুর বিবর্তন

মহাজাগতিক সংযোগ ও জীবাণুর বিবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ মার্চ, ২০২৫

টাঙ্গানিকা হ্রদের দৈর্ঘ্য ৪০০ মাইলেরও বেশি। এটি আফ্রিকা মহাদেশের গভীরতম হ্রদ এবং বিশ্বের মোট স্বাদু জলের১৬ শতাংশ এতে রয়েছে । প্রায় দুই থেকে তিন কোটি বছর আগে এই হ্রদের মাছের সংক্রামক এক জীবাণু প্রজাতির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।ইউসি সান্তা ক্রুজের বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় বোঝা যায় এই জীবাণুর বৃদ্ধি দূরবর্তী নক্ষত্রের বিস্ফোরণের কারণে হয়েছিল। সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ক্যাটলিন নোজিরি ও অধ্যাপক এনরিকো রামিরেজ-রুইজ এবং নোয়েমি গ্লোবাসের একটি নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে বিস্ফোরিত একটি সুপারনোভা (একটি বিশাল বিস্ফোরিত নক্ষত্র) সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মাটিতে থাকা লোহাকে অধ্যয়ন করে এটি আবিষ্কার করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীতে বিকিরণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই বিকিরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি জীবন্ত প্রাণীর জিনোমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে টাঙ্গানিকা হ্রদে জীবাণুগুলি নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র ও মহাকাশের ধূলিকণার গতিবিধি অনুসরণ করে পৃথিবীতে একটি বিশেষ ধরণের তেজস্ক্রিয় লোহার (আয়রন-৬০) উৎস খুঁজে পেয়েছেন।এই লোহার তেজস্ক্রিয়তা কতটা ক্ষয় হয়েছে তা পরিমাপ করে তারা বুঝতে পেরেছেন এটি দুটি আলাদা সময়ের বিস্ফোরণ থেকে এসেছে। একটি ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগের এবং অন্যটি ৬ কোটি ৫০ লক্ষ্য বছর আগের । আমাদের সৌরজগৎ মহাকাশের একটি বড়, প্রায় খালি অঞ্চলে অবস্থিত ,যাকে বলা হয় লোকাল বাবল বা স্থানীয় বুদবুদ। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে, পৃথিবী এই বুদবুদের প্রান্তে প্রবেশ করেছিল।এখানে প্রচুর নক্ষত্রধূলি ছিল। এই ধূলিকণার কিছু অংশে আয়রন-৬০ ছিল।এগুলি আমাদের গ্রহে এসে জমা হয়েছিল। এরপর, ২ থেকে ৩ কোটি বছর আগে, একটি কাছাকাছি সুপারনোভার বিস্ফোরণ হয় । এর ফলে আরও বেশি তেজস্ক্রিয় লোহা( আয়রন-৬০) পৃথিবীতে জমা হয়।অর্থাৎ পৃথিবীতে পাওয়া আয়রন-৬০ সম্ভবত দু ভাবে এসেছে।প্রথমত লোকাল বাবলের প্রান্তের নক্ষত্রধূলি থেকে। দ্বিতীয়ত কাছাকাছি একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে। বিজ্ঞানী নোজিরি ও অন্যান্য গবেষকরা একটি কম্পিউটার নকশা তৈরি করেছিলেন।এর মাধ্যমে তারা বুঝতে চেয়েছিলেন এই সুপারনোভা পৃথিবীকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাদের নকশা প্রমাণ করেছে যে বিস্ফোরণের পরে পৃথিবী প্রায় ১ লক্ষ বছর ধরে এই মহাজাগতিক রশ্মিগুলির আঘাত পেয়েছিল।বিজ্ঞানীরা সেই সময়েই পৃথিবীতে বিকিরণের পরিমাণ বাড়ার প্রমাণ পেয়েছেন । নতুন নকশাটি এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করেছেন ,এই সুপারনোভাটিই ওই অতিরিক্ত বিকিরণের কারণ ছিল। গবেষণায় জানা গেছে এই বিস্ফোরণটি পৃথিবীর দিকে প্রচুর মহাজাগতিক রশ্মি নিক্ষেপ করেছিল । এই মহাজাগতিক রশ্মিগুলি জিনোম-কে ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন জিনোমের ক্ষতি পৃথিবীতে জীবিত প্রাণীদের বিবর্তনীয় পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

ইতিমধ্যে, গবেষকরা আফ্রিকার গ্রস্ত উপত্যকার হ্রদের একটিতে জীবাণু বৈচিত্র্যের উপর গবেষণার ফল পেয়েছেন। তারা মনে করছেন এই দুটি ঘটনার সময়সীমা একই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − six =