‘মহান আমেরিকান পুনর্জাগরণ’ ও বিজ্ঞান

‘মহান আমেরিকান পুনর্জাগরণ’ ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

আমেরিকার সরকারি বিজ্ঞান সংস্থাগুলিতে ব্যাপক বিজ্ঞানী ছাঁটাইয়ের খবর এখন পুরোনো। কিন্তু যেসব বিজ্ঞানী এখনো ছাঁটাই হননি, তাঁদের কী অবস্থা? এর উত্তর পাবার জন্য নেচার পত্রিকা একটি সমীক্ষা করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক বিজ্ঞানীই জানাচ্ছেন, তাঁদের কাজ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাঁরা সংগত আতঙ্কেই নাম প্রকাশ করতে পারছেন না।
পৃথিবীর মধ্যে প্রথম সারির গবেষণা সংস্থা রূপে পরিচিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট্‌স অব হেলথ (এন আই এইচ)-এর এক মুখ্য গবেষক জানিয়েছেন, সংস্থাটি “এখন একেবারে বিধ্বস্ত, নিষ্ক্রিয়। অস্থায়ী বা স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ। বাইরের লোকদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কোথাও যেতে পারি না”। অন্য অনেক সরকারি বিজ্ঞানী জনিয়েছেন, গবেষণাপত্র প্রকাশ করার খরচ তাঁদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। ল্যাবে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর মালমশলা কেনার টাকা নেই। মুখ্য গবেষক বলেন, সরকারি পলিসি যে আগে একেবারে আদর্শ ছিল তা তো নয়। ট্রাম্প আসার আগেই এর কিছু সংস্কার দরকার ছিল। সেটাকে বিজ্ঞানীরা স্বাগতই জানাতেন। কিন্তু এখন যা করা হচ্ছে তার পিছনে যেন প্রশাসণের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের অর্থলালসা পূরণের উদ্দেশ্যটাই প্রকট। ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি ক্রেডিট ব্যবহারের ওপর সে সীমা বেঁধে দেয় তার ফলে এন আই এইচ-এর মতো সংস্থার ল্যাবে গ্লাভস, কাচনল (পিপেট), কাগজের তোয়ালে, জীবাণু চাষের ‘পেট্রি ডিশ’, বিকারক (রিএজেন্ট), প্রভমান রঙ্গক, মজুত করে রাখবার শিশি প্রভৃতি নিতান্ত অপরিহার্য জিনিসও কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। অঙ্গদাতাদের মস্তিষ্ক হিমশীতল করে রাখা ও প্রক্রিয়াকরণ করার জন্য একটি বিশেষ রাসায়নিক লাগে; একটি ল্যাবে সে-রাসায়নিক নিঃশেষ। এন আই এইচ যেসব যেসব ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালায় তার ওপরেও আঘাত এসেছে। রক্তের নমুনা পরীক্ষাকারী একটি সংস্থার অর্ধেকেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। এর ফলে ক্যান্সার চিকিৎসা, অঙ্গ সংস্থাপন ও আরও বেশ কিছু কাজের পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আদালতি হস্তক্ষেপে ছাঁটাই গবেষকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলেও তাঁদের “প্রশাসনিক ছুটি” নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
এন আই এইচ-এর আরেকজন গবেষক বলেছেন, মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই তাঁদের ওপর গাদাগাদা প্রশানিক কাজের ভার চাপানো হচ্ছে, যাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দুষ্কর হয়ে পড়ে। ভ্যাকসিন, জলবায়ু গবেষণা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গবেষণা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মনোবল ভাঙছে।
আর একটি বিখ্যাত সংস্থা ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এন ও এ এ ) –র কিছু বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, তাঁদের বহিরঙ্গন গবেষণা বন্ধ, যেহেতু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগানদার বহু পুরোনো ঠিকাদারদের আপাতত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তির কর্মসূচিগুলিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা মাপা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এসবেরই উদ্দেশ্য নাকি মহান আমেরিকান পুনর্জাগরণের পথ প্রশস্ত করা। এ সংকট কিন্তু আমেরিকার নয়। সেখানকার বিজ্ঞানচর্চা যেহেতু সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অবদানে সমৃদ্ধ, তাই আমেরিকার বর্তমান পরিচালকদের এই বিজ্ঞান-বিদ্বেষ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলকে শঙ্কিত করে তুলেছে।
সূত্র: doi:https://doi.org/10.1038/d41586-025-01245-2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 2 =