মাংস-ভাত? প্রোটিনের উৎস পরিবর্তন হতে পারে

মাংস-ভাত? প্রোটিনের উৎস পরিবর্তন হতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জুন, ২০২৪

সিওলের একটা ছোটো পরীক্ষাগারে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে তৈরি গরুর মাংসের কোশ ধানে ইনজেকশন দিয়ে প্রোটিনপূর্ণ খাদ্যশস্য তৈরি করছেন, যা বিশ্বজুড়ে খাবারে বিপ্লব আনতে পারে। দলের নেতা অধ্যাপক হং জিন-কি বিশ্বাস করেন যে তাদের নতুন তথাকথিত “মাংসের চাল” পরিবেশ-বান্ধব, নৈতিক উপায়ে মানুষের প্রোটিনের উৎস হয়ে উঠতে পারে। গোলাপী রঙের এই প্রোটিনসমৃদ্ধ চাল বানাতে কোনও প্রাণীর ক্ষতি হয়নি। পরীক্ষাগারে গরুর মাংসের পেশি ও চর্বি কোশের উপাদানে তৈরি ভাতের মতোই দেখতে এই খাবার থেকে একটা ক্ষীণ মাখনের সুগন্ধ ওঠে। গবেষকদের বর্তমান প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। প্রথমে চালের দানাকে মাছের জেলটিন দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়, তারপরে ১১ দিন অবধি একটা পেট্রি ডিশে পরীক্ষাগারে গরুর মাংসের আদলে তৈরি কোশ পৃথকভাবে ইনজেকশন দেওয়া হয়। ধানের সামান্য ছিদ্রযুক্ত কাঠামো রয়েছে, একবার গরুর মাংসের কোশ চালের মধ্যে প্রবেশ করানো হলে, ধান কোশের জন্য একটি আদর্শ গঠন প্রদান করে যাতে তা ভিতর থেকে সমানভাবে বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বব্যাপী নানা কোম্পানী মাংসের বিকল্পগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা করেছে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক বা পরীক্ষাগারে তৈরি মাংস। এতে পশুপালন শিল্প ঘিরে নৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয় না বা পশু চাষ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সাথে পরিবেশগত উদ্বেগ জড়িত থাকে না। এই চালে ৮ শতাংশ বেশি প্রোটিন ও ৭ শতাংশ বেশি ফ্যাট আছে। পরিবেশ বান্ধব এই চাল আপৎকালীন অবস্থায় আফ্রিকার দেশে ত্রাণের জন্য ব্যবহার করা যায়। গবেষকদের বক্তব্য যারা দিনে মাত্র এক বেলা খাবার পান, তাদের খাবারে প্রোটিন সামান্য কিছু শতাংশ বাড়লেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মাংস নিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের বাধা নিষেধ আছে, কিন্তু এগুলো কার্বন ফুট প্রিন্ট কমাতে ও বিশ্ব উষ্ণায়ণ রুখতে খুব কার্যকারী। গ্লোবাল কনসালটেন্সি এটি কিয়ার্নের ভবিষ্যদ্বাণী ২০৪০ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী মাংস মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ প্রচলিত উত্স থেকে আসবে। দুধ, ডিমের সাদা অংশ, জেলটিন এবং মাছের মতো পণ্য প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হবে। মানুষ ক্রমশ সচেতন হবে ও নিজের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করবে। বর্তমান গবেষণার ফল দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সাহায্য করা বা মহাকাশে মহাকাশচারীদের খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।