মাইক্রোওয়েভ মগজ চিপ

মাইক্রোওয়েভ মগজ চিপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

সম্প্রতি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা তৈরি করেছেন এক বিস্ময়কর মাইক্রোচিপ।এ ডিজিটাল সার্কিট নয়, মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ দিয়ে চিন্তা করে।নাম “মাইক্রোওয়েভ ব্রেন”। ক্ষুদ্র এই চিপটি মুহূর্তের মধ্যে রেডার ট্র্যাকিং, সংকেত ডিকোডিং ও ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে, অথচ বিদ্যুৎ খরচ করে মাত্র ২০০ মিলিওয়াটেরও কম।
এই উদ্ভাবনটির বিবরণ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নেচার ইলেকট্রনিক্স জার্নালে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি বিশ্বের প্রথম কার্যকর মাইক্রোওয়েভ নিউরাল নেটওয়ার্ক, যা সরাসরি সিলিকন চিপে গঠিত। অর্থাৎ, এটি একাধারে ডেটা প্রসেসর, রেডিও রিসিভার ও কৃত্রিম মস্তিষ্ক।
প্রধান গবেষক ডক্টরাল ছাত্র বাল গোবিন্দ জানিয়েছেন, এই চিপের বিশেষত্ব হল এর কম্পাঙ্ক বিকৃতির ক্ষমতা। এটি একসাথে অসংখ্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। ফলে যেকাজ সাধারণ কম্পিউটার অসংখ্য ধাপে ধাপে সংকেত বিশ্লেষণ মারফত করে, এই চিপ তা করে এক নিমেষে।
চিপটির নকশায় আছে মানবমস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের অনুকরণে তৈরি এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা। এর অভ্যন্তরে রয়েছে জটিল তড়িৎচুম্বক সংযোগ, যা এটিকে শিখতে, চিনতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, এবং নতুন ডেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম করে। এটি কাজ করে ডিজিটাল ঘড়ি-নির্ভর নির্দেশনার বদলে অ্যানালগ মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জে। ফলে এটি দশ গিগাহার্জেরও বেশি গতিতে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম,যা সাধারণ ডিজিটাল প্রসেসরের চেয়ে অনেক দ্রুত।
সহ-গবেষক প্রফেসর অ্যালিসা অ্যাপসেল বলেন, গোবিন্দ পুরোপুরি ডিজিটাল সার্কিটের ধরন ভেঙে নতুন এক কম্পাঙ্ক মস্তিষ্ক তৈরি করেছেন। দেখলে মনে হয়, এক নিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলা, কিন্তু ফলাফল চমকপ্রদ।
এই মাইক্রোচিপটি শুধুমাত্র গতি নয়, শক্তি ব্যবহারেও অসাধারণ কার্যকর। বিভিন্ন পরীক্ষায় এটি ৮৮% বা তারও বেশি নির্ভুলতা অর্জন করেছে, যা আধুনিক ডিজিটাল নিউরাল নেটওয়ার্কের সমতুল্য অথচ এর শক্তি খরচ ও পরিসরের প্রয়োজন তার এক ভগ্নাংশ মাত্র।
গোবিন্দ বলেছেন, “ডিজিটাল কম্পিউটারে কাজ যত জটিল হয়, ততই সার্কিট, শক্তি আর ভুল সংশোধনের প্রয়োজন বাড়ে। কিন্তু আমাদের মাইক্রোওয়েভ মগজ এই জটিলতাকে একদম সহজ করে দিয়েছে।”
এই চিপের সংবেদনশীলতা এতটাই তীক্ষ্ণ যে এটি বিভিন্ন মাইক্রোওয়েভ ব্যান্ডে অস্বাভাবিক সংকেত শনাক্ত করতে পারে। ফলে এটি হার্ডওয়্যার নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশনে উপযোগী হয়েছে ওঠে। গবেষকদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এর শক্তি ব্যবহার আরও কমানো গেলে এই প্রযুক্তি স্মার্টওয়াচ, মোবাইল ফোন বা উপগ্রহেও ব্যবহার করা যাবে।এসব ক্ষেত্রে ক্লাউড সার্ভার ছাড়াই ডিভাইস নিজেই তথ্য বিশ্লেষণ ও শেখার কাজ সম্পন্ন করবে।

যদিও এই চিপটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, তবুও গবেষকরা এর ব্যাপক ব্যবহারযোগ্যতা বা প্রসারণক্ষমতা নিয়ে আশাবাদী। তাঁরা এর নির্ভুলতা বাড়ানোর এবং বিদ্যমান মাইক্রোওয়েভ ও ডিজিটাল প্রসেসিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একে একত্রিত করার উপায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। মানবমস্তিষ্কের মতো ভাবতে শেখা এই চিপই হয়তো আগামী প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে।

সূত্র: An integrated microwave neural network for broadband computation and communication by Bala Govind, Alyssa Apsel,et.al;(14.08.2025), Nature Electronics.
DOI: 10.1038/s41928-025-01422-1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + nineteen =