মাছের বুদ্ধি

মাছের বুদ্ধি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ মার্চ, ২০২৫

বিটলরা ঠিকই বলেছিল, “ভালোবাসাই সব!” এবার নতুন এক গবেষণা বলছে প্রাণীজগতের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি হতে পারে। অন্তত মশামাছের (mosquitofish) ক্ষেত্রে তো বটেই! মশা মাছ একরকম ছোট ছো ট মাছ যা মশার লার্ভা খায় বলে মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। মধ্য আমেরিকার বাসিন্দা ছোট্ট এই মাছ এখন সারা বিশ্বেই পাওয়া যায়। গবেষকরা দেখেছেন, প্রেম খুঁজে পাওয়ার জন্য এদের মধ্যে বেশ আশ্চর্যজনক বুদ্ধিমত্তা দেখা যায়! অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষ মশক মাছ খুব বুদ্ধিমান। তারা গোলকধাঁধা পার হতে পারে এবং নানা সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারে। যারা বেশি বুদ্ধিমান ও এসব কাজে ভালো করে, তারা বেশি সঙ্গী পায়! ড. ইভান ভিনোগ্রাদভ বলেন, পুরুষ মশা মাছ সময়ের সাথে সাথে আরও বুদ্ধিমান হয়েছে, কারণ এর দ্বারা তারা সহজে স্ত্রী মাছ খুঁজে পায় এবং বেশি সন্তানের জন্ম দিতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলে “যৌন নির্বাচন”। ড. ভিনোগ্রাদভের মতে , প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা মূলত প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বেড়েছে। যারা সমস্যা সমাধানে পটু , তারা খাবার খুঁজতে, আশ্রয় পেতে ও শিকারির হাত থেকে বাঁচতে বেশি দক্ষ হয়, ফলে তারা বেশি দিন বাঁচে। এরপর তারা এই জিনগুলো তাদের সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ।ফলে পরবর্তী প্রজন্মও ধীরে ধীরে আরও বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে। কিন্তু এর আরেকটি কারণও আছে! বুদ্ধিমত্তা বরাবরই বিপরীত লিঙ্গের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। বুদ্ধিমান প্রাণী সহজে সঙ্গী খুঁজে পায়, বেশি মিলিত হয় এবং বেশি সন্তানের জন্ম দেয়। এট থেকে বোঝা যায় যে মশা মাছের বুদ্ধিমত্তা কিছুটা যৌন নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নত হয়েছে। যারা সঙ্গী খুঁজতে ও সন্তান উৎপাদনে বেশি সফল, তাদের বৈশিষ্ট্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেশি দেখা যায়। সাধারণত পুরুষ মাছেরা সঙ্গী খুঁজতে বেশি প্রতিযোগিতা করে কারণ মিলনের জন্য প্রস্তুত স্ত্রী মাছের সংখ্যা তুলনামুলকভাবে কম। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মশক মাছ শুধু খাবার খোঁজার বা শিকারির হাত থেকে বাঁচার জন্য নয়, সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রেও বুদ্ধিমান হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের মতোই, ভালোবাসাই সব কিছুকে জয় করে। গবেষকরা জলের নিচে মশা মাছের বুদ্ধি পরীক্ষা করেছেন। তারা মাছগুলোকে গোলকধাঁধা পার হতে, বাধা এড়িয়ে যেতে এবং বিভিন্ন রঙ মনে রাখা শেখানোর চেষ্টা করেছেন। গবেষকরা দুই মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, অন্য পুরুষদের সাথে স্ত্রী মাছের জন্য প্রতিযোগিতা করার সময় প্রতিটি পুরুষ মশা মাছ কত সন্তানের জন্ম দিয়েছে।২,০০০-এর বেশি পরীক্ষা করার পর, বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যেসব বুদ্ধিমান মাছ পরীক্ষাগুলো সফলভাবে পার করেছে তারাই বেশি স্ত্রী মাছের সাথে মিলিত হয়েছে এবং বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এই পুরুষ মাছগুলোর মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা তাদের সঙ্গিনী পাওয়ার সুযোগ বাড়িয়েছে।হতে পারে স্ত্রী মাছেরা বুদ্ধিমান পুরুষ মাছদের বেশি পছন্দ করেছে, অথবা বুদ্ধিমান পুরুষ মাছেরা স্ত্রী মাছদের তাড়া করে জোর করে মিলিত হয়েছে। মশা মাছের মধ্যে এটা সাধারণ একটি আচরণ হলেও, কিছুটা অস্বস্তিকর। পুরুষ মাছদের আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা এবং বুদ্ধিমান ও কম বুদ্ধিমান পুরুষ মাছের মিলনের আচরণের ভিন্নতা বোঝার জন্য ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই গবেষণাটি নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 16 =