মানব অ্যাণ্টিবডি থেকে অ্যাণ্টিভেনাম!

মানব অ্যাণ্টিবডি থেকে অ্যাণ্টিভেনাম!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মে, ২০২৫

বিজ্ঞানীরা একটি সম্ভাব্য সর্বজনীন সাপের বিষ প্রতিষেধক তৈরি করেছেন। এটি অতিরিক্ত অনাক্রম্যতা(রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বিশিষ্ট এক ব্যক্তির অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে। এটি প্রাণঘাতী সাপের বিভিন্ন প্রজাতির বিরুদ্ধে ব্যাপক সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
সাধারণত, প্রতিষেধক তৈরি করতে ঘোড়া বা ভেড়ার শরীরে বিষ ইনজেক্ট করে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করা হয়।শত বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যাণ্টিভেনাম তৈরির পদ্ধতি মুলত এরকমই ছিল। তবে এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট সাপের জন্য কাজ করে এবং মানুষের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই গবেষকরা এমন একজন ব্যক্তির অ্যান্টিবডি ব্যবহার করেছেন যিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন বিষাক্ত সাপের দংশন সহ্য করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছেন। এই অ্যান্টিবডি একটি ছোট আণবিক প্রতিরোধকের সাথে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী প্রতিষেধক মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে, যা ব্ল্যাক মাম্বা, কিং কোবরা ও টাইগার সাপ এর মতো প্রাণঘাতী সাপের বিষকে সহজেই নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম।
অ্যাণ্টিভেনাম তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা একটি পরীক্ষার প্যানেল তৈরি করেন। সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাবিত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯টি মারাত্মক বিষাক্ত সাপের প্রজাতির উপর পরীক্ষা চালানো হয় এবং মানুষের রক্ত থেকে দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করা হয়। এরপর তাঁরা একটি ছোট আণবিক যৌগ যোগ করে তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে একটি বিষ প্রতিষেধক মিশ্রণ তৈরি করে কতকগুলো ইদুরের দেহে বিষাক্ত সাপের বিষ ঢুকিয়ে দেন।
পরবর্তীতে গবেষকরা দাতার রক্ত থেকে পাওয়া অ্যাণ্টিবডির সাথে পরীক্ষিত সাপের বিষের নিউরোটক্সিনের (স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বিষাক্ত পদার্থ) প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে ,সাপের বিষ দ্বারা আক্রান্ত প্রতিটি ইঁদুরের ওপর অ্যাণ্টিব্ডিগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন। দেখা গেল, প্রথম অ্যান্টিবডিটি ( LNX-D09), পরীক্ষার প্যানেলে থাকা ছয়টি সাপের বিষ থেকে ইঁদুরকে রক্ষা করতে সক্ষম । এরপর, তারা ভ্যারেসপ্লাডিব নামক একটি পরিচিত বিষ প্রতিরোধক যোগ করেন, যা আরও তিনটি প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। সবশেষে, গবেষকরা SNX-B03 নামক দ্বিতীয় অ্যান্টিবডি যুক্ত করেন, যা সম্পূর্ণ পরীক্ষার প্যানেলে থাকা সব কটি সাপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।এইভাবে গবেষকরা ১৩টি সাপের বিষ প্রতিরোধ করতে এবং বাকিদের বিষও আংশিকভাবে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হন।
পরবর্তী পর্যায়ে এই প্রতিষেধকটি ইদুরের ওপর সফল প্রমাণিত হওয়ার পর এটির কার্যকারিতা নিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরীক্ষার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার পশুচিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সাপে-কাটা কুকুরদের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, গবেষকরা অন্য বড় সাপ পরিবারের, বিশেষত ভাইপারদের বিষ প্রতিরোধের জন্য একটি পৃথক প্রতিষেধক তৈরি করতে চান।
এই গবেষণা সাপের বিষ প্রতিষেধক তৈরিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী সাপের বিষের কবল থেকে জীবনরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষকরা এখন এর শিল্পোৎপাদন ও চিকিৎসা উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহায়তা খুঁজছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =