মানসিক অবসাদ প্রাচীনকালেও ছিল…

মানসিক অবসাদ প্রাচীনকালেও ছিল…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ আগষ্ট, ২০২৪

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৮ কোটি মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং প্রায় ১০০ কোটি মানুষের কোনো না কোনো ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। গবেষণা বলছে প্রাচীন যুগেও মানুষদেরও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল তারা কীভাবে তার মোকাবিলা করেছেন? মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের কিছু অন্তর্দৃষ্টি আজও প্রাসঙ্গিক। যদিও কিছু পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাচীনকালের মানুষের কাছে একটি পরিচিত বিষয়। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে ইলিয়াড এবং ওডিসির রচয়িতা বিখ্যাত কবি হোমার অবসাদগ্রস্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে, প্রাচীন গ্রিক ডাক্তাররা অনুধাবন করেছিলেন যে আমাদের স্বাস্থ্য আংশিকভাবে আমাদের চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করে। প্রায় ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা এপিডেমিক নামে এক মেডিকেল পাঠ্যতে এক বেনামী ডাক্তার লিখেছিলেন যে আমাদের স্বাস্থ্য আমাদের চিন্তাভাবনার অভ্যাস ও আমাদের জীবনধারা, পোশাক, বাসস্থান, শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে। এপিডেমিক-এ আরও বলা হয়েছে যে এক রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। সুস্থ হওয়ার আগে তিনি প্রায় ১৪ দিন শয্যায় ছিলেন। পরবর্তীতে, বিখ্যাত ডাক্তার গ্যালেন অফ পারগামাম (১২৯-২১৬ খ্রিস্টাব্দ) দেখেছিলেন যে মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটলে প্রায়শই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন আবার অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারাও যান। প্রাচীন কালে, মানসিক অবসাদ প্রতিরোধ বা চিকিত্সার বিভিন্ন উপায় ছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে দার্শনিক অ্যারিস্টিপাস মানসিক অস্থিরতা এড়াতে মানুষকে বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিতেন। আবার খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে দার্শনিক ক্লিনিয়াস নিজেই নিজের রাগ প্রশমন করতে বাজনা বাজাতেন। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের নিজস্ব কিছু পন্থা ছিল। তারা রোগীদের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য নিজেদের জীবনধারা পরিবর্তন, ব্যায়াম করা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, সমুদ্রে ভ্রমণ, দার্শনিকদের বক্তৃতা শোনা, খেলা, আধুনিক ক্রসওয়ার্ড বা সুডোকু-র মতো কিছু মানসিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতেন। চিকিত্সকরা রোগীদের উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধ খাওয়ারও পরামর্শ দিতেন। তবে গ্যালেনের চিকিৎসা পদ্ধতি একটু ভিন্ন ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কিছু নিজস্ব ধারণার কারণে মানসিক সমস্যার সূত্রপাত হয় যা মনে গেঁথে থাকে। তাই তিনি মনে করতেন মানসিক সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই ধারণাটি মন থেকে সরিয়ে দেওয়া জরুরি। তার বদলে মনে নতুন ধারণা বা আবেগ সঞ্চার করতে হবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, প্রাচীনকালে চিকিৎসকরা বিশ্বাস করতেন যে আমাদের মানসিক অবস্থা সুস্থ রাখার চাবিকাঠি হল ‘প্রচেষ্টা’। আমরা উদ্বিগ্ন থাকলে বা রেগে গেলে অথবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে এমন কিছু করা দরকার যা সেই আবেগগুলো অন্যদিকে পরিচালিত করে। আর তা সম্ভব কিছু ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে। তারা বিশ্বাস করতেন যে কোনো একক কার্যকলাপ মানসিক অবস্থাকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। তার জন্য নিজের জীবনযাপন এবং চিন্তাধারায় পরিবর্তন প্রয়োজন।
তাই বলা যেতে পারে মানসিক অবসাদ দূর করার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে আমাদের স্পষ্টতই অনেক মিল রয়েছে। ২০০০ বছর আগে পদ্ধতিগুলো যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল আজও তা রয়েছে, তবে আজ আমরা আরও নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করি এবং সঙ্গে সঙ্গে ওষুধও ব্যবহার করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 6 =