মানুষ ভয় পেতে বেশ ভালোবাসে। তাই সে ভয়ের সিনেমা দেখে, বই পড়ে, হানাবাড়ি দেখলে হানা দেয়, ভুত দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে খুব আগ্রহ। মনোবিজ্ঞান ও ভয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মানুষের মধ্যে আবেগ সার্বজনীন কারণ তা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। মনোবিদের মতে নিরাপদ জীবনে ভয়ের ত্রাস তৈরি করলে তা মানুষের কাছে উপভোগ্য হয়, এটা বাস্তব জীবনে বিপদের জন্য প্রস্তুত হওয়ার একটা উপায়।
নিয়ন্ত্রিত ভয়ের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা চাইলেই ভয়ের সিনেমা রিমোট টিপে বন্ধ করতে পারি, ভয়ের বইটাও না পড়ে বন্ধ করে দিতে পারি, ভয় লাগলে ভুতুড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি। কোনও বাস্তব ঝুঁকি ছাড়াই ভয় উদ্রেককারী বিষয় আমাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বাড়ায়। ভয় পেলে আমাদের শরীরে অ্যাড্রেনালিন বৃদ্ধি পায় আর বিবর্তনীয় ক্ষমতা লড়াই করা বা পালিয়ে বাঁচার প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়। এতে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, আমরা গভীরভাবে, দ্রুত শ্বাস নিই, আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। আমাদের শরীর বিপদের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার জন্য বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
খতরোঁ কি খিলাড়ির মতো গেম শোতে অংশগ্রহণকারীরা নানা ঝুঁকি মোকাবিলা করে। কোনো ঝুঁকি ছাড়াই টিভির সামনে বসে থেকে তাদের ঝুঁকি মোকাবিলার সময় আমাদের শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের আনন্দ আর স্বস্তির অনুভূতি দেয়। হরর ফিল্ম, ভয়ের গল্প এসবের পর আমাদের মধ্যে একটা শান্তভাব আসে। মানসিক চাপের সংস্পর্শ কেবল লড়াই-বা-পালানোর প্রতিক্রিয়া ট্রিগার করে না, অনেক পরিস্থিতিতে এই অনুভূতি সামাজিক-মানসিক বন্ধন তৈরি করতে প্ররোচিত করে। এই সিস্টেম মূলত “লাভ হরমোন” অক্সিটোসিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যাদের সাথে আমাদের ইতিবাচক সামাজিক সংযোগ স্থাপন হয়ে রয়েছে, যখন আমরা তাদের সাথে চাপ অনুভব করি, তখন আমাদের অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। মনোবিদের মতে বন্ধুদের সাথে অন্ধকারে বসে একটা ভীতিকর সিনেমা দেখা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, এটা আমাদের সামাজিক সংযোগগুলো শক্তিশালী করতে সহায়তা করে৷ নিয়ন্ত্রিত ভয়ের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, নিজেকে ভয় দেখানো এমন গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা ভীতিকর বিশ্বে বেঁচে থাকতে এবং মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। শক্তিশালী, ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করে, আমাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে সবচেয়ে খারাপ ভয় বাস্তবে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত হই।