মানুষের থেকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস অন্য প্রাণীতে ছড়ায়

মানুষের থেকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস অন্য প্রাণীতে ছড়ায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঘরের আশেপাশে ইঁদুর দেখলেই রোগজীবানু ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আমরা তাড়াতে থাকি। বাদুড় থাকলেও আমরা ভয় পাই। কিন্তু গবেষণা জানাচ্ছে গৃহপালিত বা বন্য পশু থেকে আমাদের যত ভাইরাস সংক্রমণ হয়, তার দ্বিগুণ ভাইরাস আমাদের থেকে তাদের মধ্যে ছড়ায়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিসিস্ট সেড্রিক ট্যান বলেছেন, কীভাবে, কেন নানা ভাইরাস বিভিন্ন হোস্টে আক্রমণ করে তা বুঝতে পারলে মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে কীভাবে নতুন ভাইরাল রোগের উদ্ভব হয় তা বুঝতে সাহায্য হবে। নেচার, ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে গবেষকরা ৩২ টা ভাইরাল পরিবার শনাক্ত করেছেন যেগুলো মানব শরীরকে সংক্রামিত করতে পারে। এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফ্রিকোয়েন্সি দেখলে দেখা যায় ৬৪% ভাইরাস মানুষ থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়িয়েছে যা নৃতাত্ত্বিক সংক্রমণ হিসাবে পরিচিত। মানুষের বিশাল জনসংখ্যা, পৃথিবী জুড়ে বিস্তার ভাইরাসকে অন্য প্রাণীকে আক্রমণ করার বেশি সুযোগ করে দেয়। কিন্তু অন্যান্য প্রজাতির ভাইরাসদের তুলনামূলকভাবে সুযোগ সীমাবদ্ধ৷ তাছাড়া আবাসস্থল পরিবর্তন বা ধ্বংস করে, দূষণ ছড়িয়ে, আমাদের নানা কাজে চারপাশের পরিবেশের প্রাণীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আমরা প্রতিবেশী প্রাণীদের ভাইরাসঘটিত আক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছি। নৃতাত্ত্বিক ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বিপন্ন প্রজাতির জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ, যা বন্যপ্রাণীকে টিকা দেওয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মানুষ ভাইরাস হোস্টের এক বৃহৎ এবং জটিল নেটওয়ার্ক যেখানে ভাইরাসগুলোর অবিরাম আদান-প্রদান হয়। এই গবেষণায় চিহ্নিত সম্ভাব্য হোস্ট জাম্পের ৮১% ক্ষেত্রে মানুষ জড়িত ছিল না। তাছাড়া ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি পরিচিত প্রাণী ভাইরাস রয়েছে, যা অন্যান্য প্রজাতি থেকে ০.১ শতাংশেরও কম মানুষকে সংক্রামিত করে।
মানুষের থেকে অন্য প্রাণীতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে তা কিন্তু নয়। ধরা যাক কোনো ভাইরাস মানুষের থেকে বাহিত হয়ে অন্য প্রাণীকে আক্রমণ করল। সেই ভাইরাস মানুষের ক্ষেত্রে নির্মূল করা সম্ভব হল। কিন্তু অন্য প্রাণী থেকে তার পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকছে, আর এবার কিন্তু সেই ভাইরাস অভিযোজিত রূপে মানুষকে আক্রমণ করবে। কোভিড-১৯ এর ধ্বংসলীলায় শুধুমাত্র একটা ভাইরাস ছড়িয়েছিল। ট্যান এবং তার সহকর্মীরা এমন বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করেছেন যা ভাইরাসের জুনোটিক হওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। তারা দেখেছেন যে ভাইরাসগুলোর জাম্পিং প্রজাতি হওয়ার বেশি প্রবণতা থাকে, তাদের জিনগত পরিবর্তনের হার যে ভাইরাস বড় পরিসরে হোস্টকে সংক্রামিত করছে তার তুলনায় অনেক বেশি। অবশ্যই বেশি সংখ্যক প্রাণীর মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ তা কাজে লাগিয়ে সাধারণ ভাইরাসগুলো ছড়িয়ে পড়ে, যেমন সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে থাকা ACE2 হোস্ট-সেল রিসেপ্টর ব্যবহার করে COVID-19 ছড়িয়ে পড়েছে। আর আমাদের কাছে যেসব প্রাণীরা থাকে তাদের থেকে এই ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।