মানুষের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত কাঠের টুকরোর প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা

মানুষের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত কাঠের টুকরোর প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

দুটো কাঠের টুকরো জুড়ে তৈরি করা এই বস্তুটি প্রায় কয়েক লাখ বছর ধরে সূর্যালোক দেখেনি। কাঠের এই জিনিস প্রস্তর যুগের পূর্বপুরুষদের প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে বর্তমান যুগের কিছু মৌলিক অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ২০১৯ সালে জাম্বিয়ার কালামবো জলপ্রপাত থেকে খুঁড়ে বার করা এই বস্তুগুলো প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্য-প্যালিওলিথিক যুগের আফ্রিকার কাঠের প্রযুক্তি সম্পর্কে একটি ব্যতিক্রমী ছবি তুলে ধরে। ওই সময় আফ্রিকায় পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার ত্বরাণ্বিত হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এই কাঠের টুকরোগুলো মানুষের প্রজাতি, হোমো সেপিয়েন্সের বিবর্তনের পূর্ববর্তী। গবেষকদের এক আন্তর্জাতিক দল দ্বারা পরিচালিত একটি বিশ্লেষণ বর্তমানে এক আশ্চর্যজনক উপসংহারে এসেছে যে কাঠের নিদর্শনগুলো একসময় কোনো স্থায়ী কাঠামোর অংশ ছিল, যেমন প্ল্যাটফর্ম বা বাড়ি। যদি তাই হয়, আবিষ্কারটি হোমিনিন, যারা পশু শিকার করত বা অপেক্ষাকৃত মৌলিক সরঞ্জাম দিয়ে মৌসুমী উদ্ভিদ সংগ্রহ করত, তাদের যাযাবর জীবনের প্রচলিত চিত্রকে জটিল করে তোলে। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ল্যারি বারহামের মতে, ‘পাথর যুগ’ লেবেলটি ভুলে দেখতে হবে এই প্রজাতির লোকেরা কী করছিল – তারা কাঠ থেকে নতুন এবং বড়ো কিছু তৈরি করেছিল। তারা তাদের বুদ্ধি, কল্পনা এবং দক্ষতা ব্যবহার করে এমন কিছু তৈরি করেছিল যা তারা আগে কখনও দেখেনি, এমন কিছু যা আগে কখনও ছিল না। যদিও মধ্য-প্লিস্টোসিন হোমিনিনের কাঠের কাজের পরোক্ষ লক্ষণ উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ বা পাথরের নমুনার আকারে পাওয়া যায়, কাঠ থেকে খোদাই করা প্রস্তর যুগের জিনিসপত্র খুব কমই আজ উদ্ধার করা গেছে।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, কালামবো জল্প্রপাতের কিছু জায়গার খননকালে মানুষের পূর্বপুরুষদের হাতে খোদাই করা কিছু অদ্ভুত কাঠের জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই জিনিসগুলো কমপক্ষে ১১০ হাজার বছর বা আরও বেশি পুরানো। দুটো কাঠের টুকরো যোগ করে যে বস্তুটি তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে এমন একটা অংশ ছিল যার সাহায্যে সেটি অন্য একটি কাঠামোতে আটকে রাখা যায়। খনন করা প্রতিটা কাঠের বস্তু আফ্রিকার সাভানার স্থানীয় প্রজাতির গাছ থেকে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে যার মধ্যে কাটা, খনন এবং সম্ভবত একটি ইচ্ছাকৃতভাবে খোদাই করা খাঁজের চারপাশে পুড়িয়ে ফেলার লক্ষণও রয়েছে। দুটো এক মিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের কাঠের টুকরো যাদের শেষের দিকটি ছুঁচালো প্রতিটিতে খোদাই করার স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। খননের অঞ্চলে বেশ কিছু অন্যান্য ছোটো কাঠের নিদর্শন এবং পাথরের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। গবেষকরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে হোমো সেপিয়েন্সের বিবর্তনের আগে এই কাঠের বস্তু তৈরি হয়েছিল। বারহাম মনে করেন সেই সময়কার অধিবাসীরা তাদের জীবনকে সহজ করার জন্য তাদের চারপাশের পরিবর্তন করেছে, বস্তুটি হয়তো বা শুধুমাত্র নদীর ধারে বসে তাদের দৈনন্দিন কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হত। হয়তো বা আজকের মানুষের সাথে এই প্রজাতির যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে বেশি সাদৃশ্য ছিল।