মুখ চিনতে পারার সাথে সামাজিক বন্ধনের যোগসূত্র আছে

মুখ চিনতে পারার সাথে সামাজিক বন্ধনের যোগসূত্র আছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুলাই, ২০২৪

কারোর সাথে কিছুদিন আগে আলাপ হয়েছিল, আপনারা নিজেদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পরে সেই ব্যক্তি আপনাকে রাস্তায় দেখে মোটেও চিনতে পারলেন না। আপনার বিষয়টা মোটেও ভালো লাগবে না, ব্যক্তিটির প্রতি বিরাগ জন্মাবে, মনে হবে তিনি আপনাকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। কগনিশন জার্নালে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল গবেষণায়, মানুষের মুখ মনে রেখে তাকে চিনতে পারা নিয়ে কিছু ফলাফল জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হল যে একজন ব্যক্তির মুখ চিনতে পারার ক্ষমতার সাথে প্রধানত সেই ব্যক্তির সঙ্গে অপর ব্যক্তির কতটা ভাল সম্পর্ক তার যোগ আছে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া (ইউনিএসএ), ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (ইউডাব্লুএ) এবং কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা, ওয়েলেসলি কলেজ এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা, ৩০০০ জনেরও বেশি লোককে নিয়ে চারটি পৃথক গবেষণা করেন, যেখানে মুখ চেনা, সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য দেখা হয়েছে।
তাদের অনুসন্ধান বলছে সামাজিক হওয়ার অর্থ এটা নয়, যাকে দেখলেন তাকে দেখলেই আপনি চিনতে পারবেন। আবার কাউকে চিনতে না পারার অর্থ এটা নয় যে আপনি অসামাজিক। দ্রুত মুখ চিনতে পারার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা দ্রুত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে৷ যেমন কারোর সাথে আপনার হয়তো প্রথমবার দেখা হয়েছে, আপনাদের দুজনের মধ্যে একটা আকর্ষণীয় কথোপকথন হয়েছেন৷ কয়েক সপ্তাহ পরে আপনার সাথে তার আবার হঠাৎ দেখা। যদি আপনি তাকে দ্রুত এবং সহজে চিনতে পারেন, তবে প্রথম সাক্ষাতে আপনাদের মধ্যে যে সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল, সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে দেখে চিনতে না পারেন, তাহলে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা আপনি হারালেন। গবেষকদের মতে কাউকে চিনতে পারা মানে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া যা সেই ব্যক্তির আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে। এতে সেই ব্যক্তি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান বোধ করেন, যার থেকে সুন্দর উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। আবার যদি আগে কারোর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু তিনি আমাকে চিনতে পারছেন না, এরকম পরিস্থিতিতে আমরা ক্ষুব্ধ বোধ করি।
গবেষকদের মতে এই ফলাফল শক্তিশালী সম্প্রদায় তৈরি করতে কাজে লাগবে যা মানুষের সংযোগ সহজতর করবে। এই গবেষণার অন্যতম প্রফেসর উইলমারের মতে সবাই সহজে মানুষকে চিনতে পারে না তা বোঝা সহজ হবে, যা আমাদের চারপাশের অন্যান্য লোকদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় সমর্থন করতে সাহায্য করতে পারে। সহজ কিছু কাজ কাছে যা সহজে অন্যকে সংযোগ তৈরি করতে আর সংযোগ হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য করতে দেবে৷ একইভাবে, আপনি যদি হ্যালো বলার সময় কারো মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ দেখতে পান, তবে তাদের সূক্ষ্মভাবে সাহায্য করতে পারেন। এতে আপনি আরেকজনকে সাহায্য করছেন, কারণ মুখ মনে রাখার ক্ষমতা সকলের সমান নয়।