মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের প্রত্যাবর্তন

মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের প্রত্যাবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
কয়েক বছর আগেও চাকরির ইন্টারভিউ মানেই ছিল অফিসে গিয়ে একটা গুরুগম্ভীর পরিবেশে প্রশ্ন-উত্তরের লড়াই। কিন্তু, কোভিড মহামারির পর থেকে প্রযুক্তি জগতে ভার্চুয়াল মিটিং ও অনলাইন সাক্ষাৎকারই হয়ে উঠল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনলাইনে প্রশ্ন করা, ভিডিও কলে কোডিং চ্যালেঞ্জ দেওয়া, এমনকি আচরণগত পরীক্ষা, সবকিছুই কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই হতে লাগল। সময় বাঁচল, খরচও কমল। কিন্তু এটিই হয়ে উঠল নতুন এক সমস্যা। দেখা গেছে, অনেক প্রার্থী গোপনে এআই টুল ব্যবহার করে সাক্ষাৎকারে উতরে যাচ্ছেন, এমন অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছিল। আসল আর নকল দক্ষতার পার্থক্য মুছে যাচ্ছিল।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যন্তরীণ টাউনহল বৈঠকে গুগলের কর্মীরা সরাসরি এই সমস্যার কথা উত্থাপন করেন। অনেকেই বলেন, প্রার্থীরা এআই টুল ব্যবহার করে উত্তর দিচ্ছেন, ফলে তাদের আসল দক্ষতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি একজন কর্মী সরাসরি প্রস্তাব দেন—“আমরা কি আবার প্রার্থীদের অফিসে ডাকতে পারি না? অন্তত একটা রাউন্ড যেন থাকে, যেখানে এআই কোনো সাহায্য করতে পারবে না।”
গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অব রিক্রুটিং ব্রায়ান অং স্বীকার করেন, এই সমস্যা বাস্তব। যদিও অনলাইন সাক্ষাৎকারের ফলে নিয়োগের সময়সীমা প্রায় দুই সপ্তাহ কমেছে, তবুও মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মতো স্বচ্ছতা তাতে নেই। এই দাবি এবার সরাসরি পৌঁছে গেল গুগলের সিইও সুন্দর পিচাইয়ের কানে। তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু অনলাইন নয়, এখন থেকে ফিরছে আবার আগের মতো মুখোমুখি সাক্ষাৎকার।
সুন্দর পিচাই লেক্স ফ্রিডম্যানের পডকাস্টে খোলাখুলি বলেন, “আমরা যেহেতু নিজেরাও দোআশলা কাজ করি, তাই কিছু সাক্ষাৎকার সরাসরি হওয়া উচিত। এতে প্রার্থীরা গুগলের কৃষ্টি বুঝতে পারবে, আর কোম্পানির পক্ষেও সঠিক মূল্যায়নের সুবিধা হবে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ করে যেসব পদে ব্যবহারিক দক্ষতা যেমন , কোডিং চ্যালেঞ্জ জরুরি, সেখানে অন্তত একটি সরাসরি সাক্ষাৎকার এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হবে। পিচাই নিশ্চিত করেছেন যে, অন্তত এক রাউন্ড ইন-পার্সন ইন্টারভিউ থাকবে, যাতে প্রার্থীর মৌলিক দক্ষতা যাচাই করা যায়।
শুধু গুগল নয়, আই টি জগতের বাকি বিখ্যাত কোম্পানিগুলোও একই সমস্যায় ভুগছে। প্রতিবেদন বলছে, কিছু প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী অনুমতিহীন এআই টুল ব্যবহার করছেন। বহু প্রতিষ্ঠান এবার তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনছে। অ্যামাজন এখন প্রার্থীদের থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নিচ্ছে যে তারা সাক্ষাৎকারে এআই ব্যবহার করবেন না। এআই নিরাপত্তা সংস্থা অ্যানথ্রোপিকও তাদের প্রার্থীদের এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
এছাড়া ম্যাককিনসি, ডেলয়েট ও সিসকোর মতো বিশ্বখ্যাত সংস্থাও নির্দিষ্ট পদে আবার মুখোমুখি সাক্ষাৎকার ফিরিয়ে এনেছে। ডেলয়েট ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে এই নিয়ম কার্যকর করেছে।
অতি আধুনিক এআই যুগে দাঁড়িয়েও প্রার্থীদের আসল প্রতিভা যাচাই করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি সেই পুরনো সরাসরি সাক্ষাৎকারই। অর্থাৎ , একটা কথা পরিষ্কার যে প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক, সামনাসামনি চোখে চোখ রেখে দক্ষতা যাচাই করার মূল্য কোনোদিন কমবে না।
সূত্র: Google brings back in-person job interviews as CEO Sundar Pichai cracks down on AI cheating by Divya Bharati (India Today).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =