বনের রাণি, টুকরী বানী
‘ক্ষুদ্র এ বনফুল পৃথিবী কাননে,
আকাশের তারকারে পুজে মনে মনে ।
দিন দিন পূজা করি শুকায়ে পড়িছে ঝরি,
আজন্ম নীরবে থাকি যায় প্রাণ যাক’।
টুকরী বানী সুন্দরবনের একটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতি। এটি সত্যিই এক ক্ষুদ্র বনফুল সুন্দরবনে। এবং এটাও ঠিক যে, এটি ‘শুকায়ে পড়িছে ঝরি, আজন্ম নীরবে থাকি’। রবীন্দ্র সঙ্গীতের এই লাইন গুলোকে টুকরী বানীর জীবনের সাথে মেলানো যায়। সুন্দরবনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে টুকরী বানীর উল্লেখ আছে। অর্থাৎ একসময় এই গাছটি সুন্দরবনে ভালোরকম পাওয়া যেত। এখন এটি একেবারে নীরব। টুকরী বানীর সুন্দরবনে পুনঃ আবিষ্কারের গল্পটা তাহলে শুনুন। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম টুকরী বানী আর সুন্দরবনে নেই। বকখালির পিছনের দিকের একটা ছোট্ট খাড়িতে জোয়ারের সময় ডিঙ্গি করে যাওয়ার পথে লেখকের একটা ছোট গাছের দিকে চোখ পড়ল। ছোট্ট গাছ, কিন্তু দেখে নতুন মনে হল। এরকম গাছ আগে সুন্দরবনে দেখা যায় নি। তাছাড়া অন্যান্য পরিচিত গাছের সঙ্গে এর কোন মিল ও পাওয়া যাচ্ছে না। মাষ্টার মশায় বিজ্ঞানী ডঃ কে আর নস্কর কে দেখানো হল। দেখেই উনি আনন্দে আটখানা ‘এই তো পেয়েছি টুকরী বানী, ভেবেছিলাম সুন্দরবন থেকে এটি হারিয়ে গেছে’। তারপর এটিকে সুন্দরবন থেকে পুনঃ আবিষ্কারের তালিকায় প্রকাশ করা হল।
ছোট গাছ সবুজ ডালপালায় ভরা। যেন এর সারা শরীরে সবুজের অভিযান। পাতা রসাল, কাণ্ডে গাঁট গাঁট থাকে। কাণ্ডের ডগাগুলো খুব নরম হয়। এই গাছটি দেখতে কতকটা রঙ্গন গাছের মত, এইরকম উচ্চতার হয়। ফুলগুলো সাদা এবং থোকা থোকা হয়ে ফুল মঞ্জুরিতে থাকে। এই গাছের সাদা ফুলের বিন্যাস দেখতে ভালো লাগে। অন্যান্য গাছের সঙ্গে থাকলেও একে পৃথক ভাবে চেনা যায়।
এই গাছকে ও বিধিন্ন ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এর চারা সুন্দরবনের ঝড়খালিতে লাগানো হয়েছে। এখন এরা পরিণত। ফুল ও ফল হয়, কিন্তু এর চারাগাছ দেখা যায় না। এই গাছ সম্ভবতঃ বেশি লবণ জলে ও বাঁচতে পারে। তাই এরা পরিবেশ স্পর্শকাতর হলেও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে এদের আপাতভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু অন্যান্য গাছের প্রতিযোগিতায় এরা পেরে ওঠে না। যদিও এটা অনুমান ভিত্তিক কথা। যথেষ্ট গবেষণা দরকার, কেন এই গাছটির সংখ্যা সুন্দরবন থেকে কমে যাচ্ছে। যে ভাবে হোক লড়াই চালিয়ে বেঁচে থাকার জন্য টুকরী বানীকে আমাদের কুর্নিশ।