ধানি ঘাসের আহ্বান
গাছগাছালি
তোমার দামাল হাওয়ায়
আমি দুলে দুলে যাই,
আমার মনের কথা
আমি সাগরে জানাই।
ধানি ঘাস সুন্দরবনের এক অতি পরিচিত উদ্ভিদ। এটি প্রথাগত ভাবে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ নয়। কারণ ম্যানগ্রোভের স্বীকৃতি এখনও কোন ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের কপালে জোটে নি। সুন্দরবনে নদীর চরে যে জায়গায় পলি জমেছে, সেখানেই অবশ্যই ধানি ঘাস জন্মাবে। তাছাড়াও অন্যান্য জায়গায় ধানিকে দেখতে পাওয়া যায়। ধানি ঘাসের তৃনাচ্ছাদিত অবস্থাকে অজানা মানুষ ধানের জমি ভেবে ভুল করতে পারে। ধানি ঘাস এবং ধান গাছ খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাইয়ের মত। অর্থাৎ এরা একই গনের (জেনাস) অন্তর্ভুক্ত। তাই এদের এত সাদৃশ। এদের মধ্যে পার্থক্য হল, ধানি লবণ জলে জন্মাতে পারে, কিন্তু ধান গাছ লবণ জলে নষ্ট হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এক উপায় বের করেছেন। এনারা ধানির সেই জিনকে আবিষ্কার করেছেন, যা কিনা একে লবণ জলে বাঁচতে সাহায্য করে। তারপর ঐ জিনকে পৃথক করতে পেরেছেন। জৈব প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে ঐ জিনকে ধান গাছের ক্রোমোজোমের মধ্যে স্থাপন করা সম্ভবপর হয়েছে। ফলস্বরূপ, ধানির জিন ধারণকারী ধান গাছ লবণ জলে জন্মাতে পারে। ঘটনাটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, পতিতালয়ের মাটি না হলে যেমন দুর্গা প্রতিমা গড়া যায় না, তেমনি ধানির জিন না হলে ধান গাছের চাষ লবণ যুক্ত মাটিতে সম্ভব নয়। তাই দামাল হাওয়ায় দুলতে দুলতে ধানি তার মনের কথা সাগরে জানায়।
যদিও গবেষণার দিক থেকে জিনের এই ব্যবহার সফল, কিন্তু এর প্রয়োগবিধি খুবই সীমিত। কারণ ধানির জিন ধারণকারী ধান গাছের চাষ এখনও সুন্দরবনে প্রসার লাভ করতে পারে নি। যদি তা সম্ভব হত, তাহলে সুন্দরবন ধান উৎপাদনে বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে পারত। সুন্দরবনে ওখানকার মানুষজন ধানি ঘাসের ধান থেকে চাল, মুড়ি, ও খই তৈরি করে। যদিও এইগুলো নিজেদের ব্যবহারে লাগায়, কারণ ধানির ধানের উৎপাদন খুবই কম।
সুন্দরবনে ধানির এক অন্য আকর্ষণ আছে। ধানি হল হরিণের সবচেয়ে পছন্দের খাবার। আপনি হরিণের পাল দেখতে চান। গভীর অরণ্যে যেখানে ধানির আচ্ছাদন, দেখতে পাবেন হরিণের পাল আয়েশ করে ধানিকে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে চকিত চাহনিতে এদিক ওদিক দেখে চলেছে। নয়নাভিরাম দৃশ্য! মনে হবে ‘আহা কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরে ও ভুলিবনা’।