ম্যালেরিয়া যুদ্ধে আয়ুধ মশারি

ম্যালেরিয়া যুদ্ধে আয়ুধ মশারি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ মে, ২০২৫

দক্ষিণ-পশ্চিম গবেষণা ইনস্টিটিউট আর হার্ভার্ড, ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা মিলে তৈরি করেছেন এক মারক মশারি। এই মশারি ছোঁয়া মানে সেটা মশার শেষ স্পর্শ। এতে মিশে রয়েছে এমন এক রাসায়নিক, যা কেবল মশাকে মৃত্যুমুখে পাঠায় না, সাথে সাথেই ধ্বংস করে তার শরীরে লুকিয়ে থাকা ‘প্লাজমোডিয়াম’ নামক পরজীবী দানবকে। এক্ষেত্রে প্রধান মারক উপাদান হল ‘এন্ডোচিন-সদৃশ কুইনোলোন’ (ELQ)। ডাঃ মাইক রুবাল সোজাসুজি বলছেন, “সংক্রামিত মশা যদি এই জালের সংস্পর্শে আসে, তার ভেতরের পরজীবী ধ্বংস হয়ে যায়।”
২০২৩-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ২৬ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, আর মৃত্যু প্রায় ৬ লাখ। ম্যালেরিয়া জীবাণু দেহে ঢুকে প্রথমে লিভার, তারপর লোহিত রক্তকণিকায় আক্রমণ চালায়। যতক্ষণ না ধরা পড়ে, ততক্ষণ সে দেহের অন্দরে খেলা করে। চিকিৎসা না পেলে এই খেলা পরিণত হয় মৃত্যুর যুদ্ধে- বিশেষত শিশু আর গর্ভবতী নারীদের জন্য। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও থেমে নেই অণুজীব-যুদ্ধ। কীটনাশক আর ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা মশাদের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। যেন এক চলমান জৈব অস্ত্র প্রতিযোগিতা!
তার ওপর নতুন নতুন রূপে পরজীবী ফিরে আসছে। তাই দরকার ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি। তাই গবেষকদের মাথায় খেলে গেল বিদ্রোহী এক ভাবনা- শত্রু তো মশা নয়, বরং তার শরীরের গুপ্তঘাতক পরজীবী! তাই তাকে ধ্বংস করাই, মোক্ষম দাওয়াই হবে।

বিজ্ঞানীরা দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের পরীক্ষাটি চালান। প্রথমে সাধারণ পলিয়েস্টার জাল নিয়ে তাতে ELQ দ্রবণের প্রলেপ দেন। অন্যদিকে এই ELQ গলিয়েই সরাসরি পলিথিন ফিলামেন্টের ভেতর রাখা হয়। সেটা থেকে তৈরি হওয়া সুতো দিয়েই বোনা যায় মশারির জাল। হার্ভার্ডের ক্যাটেরুসিয়া ল্যাবে পরীক্ষায় দেখা যায়, এই দুই প্রক্রিয়াই মারাত্মক কার্যকর। মশার শরীরে যতই প্লাজমোডিয়াম থাকুক, এই জালের ছোঁয়া মানেই তার মৃত্যু অবধারিত। ডঃ মাইকেল রিসকো বলছেন, “ELQ আসলে দুইভাবে কাজ করে। মশার পায়ের মধ্য দিয়ে শরীরে ঢুকে, সরাসরি পরজীবীকে মেরে ফেলে। আমরা দুটি ভিন্ন ELQ ব্যবহার করেছি। যার একটা প্রতিরোধ গড়ে তুললে, অন্যটা থাকবে বিকল্প সহযোগী হিসেবে।” এই ধরনের দ্বৈত প্রয়োগ ম্যালেরিয়া গবেষণায় এক নবতর দিগন্ত খুলে দেয়। এ যেন ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে, বিজ্ঞানের প্রতিরক্ষা নয় বরং সরাসরি আক্রমণ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 5 =