ম্যালেরিরাপ্টর কুট্টি

ম্যালেরিরাপ্টর কুট্টি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ মে, ২০২৫

ছায়া ফুঁড়ে আলো পড়ে গন্ডোয়ানার প্রাগৈতিহাসিক এক অরণ্যে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে এক বিপদজনক, নিঃশব্দ হানাদার। তার নাম ‘ম্যালেরিরাপ্টর কুট্টি’। এক মিটারের বেশি উচ্চতা আর নাক থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় দুই মিটার দৈর্ঘ্যের এই দ্বিপদী শিকারী। অদ্ভুত, অর্ধেক-ছায়াময়, অর্ধেক-রক্তপিপাসু দুনিয়ার সন্তান। ফার্নের আড়ালে মৃত্যু অপেক্ষা করে এখানে, প্রতিটি পাতার নড়াচড়া যেন এক সম্ভাব্য হামলার সংকেত। কাছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রাথমিক সরোপড উদাসীনভাবে চরে বেড়ালেও, রাপ্টর থেমে থাকে, সাবধানী, স্থির এবং হিসেবি। এতটুকু শব্দেও তার পেশী সজাগ হয়, লেজ হেলে যায় ভারসাম্যে, আর চোখে জ্বলে ওঠে উপক্রমের আগুন। এই ভয়াল, তীক্ষ্ণ জীবাশ্ম-দৃষ্টান্তটি শুধু একটা প্রাণীর গল্প নয়, এ বিজ্ঞানের এক রোমাঞ্চকর আবিষ্কার। ‘মালেরি’ অর্থ মাটির গঠন থেকে, যার গভীরে ইতিহাস ঘুমোয়। ‘রাপ্টর’ মনে চোরা শিকারী, বা ছায়ার ধারক। আর ‘কুট্টি’ এসেছে টি এস কুট্টিকে সম্মানিত করার জন্য। এই মানুষটিই জীবাশ্মটিকে প্রথম চিনেছিলেন। বুয়েনস আইরেসের মিউজিও আর্জেন্টিনো ডি সিয়েনসিয়াস ন্যাচারালেস এর নেতৃত্বে এক আন্তর্জাতিক গবেষকদল, দক্ষিণ-মধ্য ভারতের ‘উচ্চ মালেরি গঠন’ থেকে শনাক্ত করেছেন এই নতুন ‘হেরেরাসোরিয়ান’ ডাইনোসর প্রজাতি। ট্রায়াসিক যুগের শেষ ধাপে, যেখানে ভারতীয় উপমহাদেশ তখনও গন্ডোয়ানার শেকলে বাঁধা, প্রাণহিতা-গোদাবরী অববাহিকায় লুকিয়ে ছিল এক ভিন্ন বাস্তবতা, ডাইনোসরদের আরম্ভকাল। ম্যালেরিরাপ্টর কুট্টি এই অঞ্চলকে স্থান করে দিয়েছে ডাইনোসর বিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানচিত্রে।
‘হেরেরাসোরিয়ান’রা কে? তারা সেই আদিম থেরোপড, যাদের রক্ত লাল, যারা ছায়ায় তীক্ষ্ণ, যারা কঙ্কালে এমন অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য নিয়ে এসেছিল যা তাদের আজকের হিংস্রতম ডাইনোসরদের পূর্বপুরুষ করে তোলে। আগে ভাবা হত, দক্ষিণ আমেরিকাতেই এগুলি পাওয়া যেত, কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, তারা ভারতের মৃত্তিকায় তাদের ছাপ ফেলে গেছে। হাড়ের প্রতিটি রেখায় লেখা ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। ISIR 282 নম্বর জীবাশ্মের ব্যতিক্রমী সংগ্রহ সেই অধ্যায়ের সাক্ষ্য। নিতম্বের নীচের ত্রিকাস্থি (সেক্রাম), পুচ্ছ কশেরুকা, নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত্র (ইলিয়াম), শ্রোণিদেশের সম্মুখস্থ অংশ ( পিউবিস)—প্রতিটি হাড় যেন তার বংশপরিচয় জানাতে প্রস্তুত। দুটি পৃথক বংশলতিকাগত (ফাইলোজেনেটিক) উপাত্ত ব্যবহার করে গবেষকরা প্রমাণ করেন কুট্টিদের অস্তিত্ব। উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী প্রাচীন হেরেরাসাউরিডির দ্বৈত বৈশিষ্ট্য কুট্টিটিকে করে তোলে এক বিরল সংকর। এই আবিষ্কার শুধু যে একটা নতুন নাম যোগ করল তালিকায় তা নয়, দেখিয়ে দিল, রাইঙ্কোসরদের বিলুপ্তির পরে যে জৈবিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, তার মধ্যেও এই প্রাণী টিকে ছিল। এ সেই বিবর্তনগত সহ্যক্ষমতার সাক্ষী।
সূত্র: Martín D. Ezcurra et al, A new herrerasaurian dinosaur from the Upper Triassic Upper Maleri Formation of south-central India, Royal Society Open Science (2025).

DOI: http://10.1098/rsos.250081
Journal information: Royal Society Open Science

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =