
বহু-ব্যবহৃত ফাংশানাল ইমেজিং (এফ এম আর আই) প্রকৌশল থেকে কেবল এইটুকু দেখা যায় যে মস্তিষ্কের কোন কোন অংশের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কিন্তু তার কারণ কী, তা বোঝা যায় না। এদের কার্যকারণ সম্পর্ককে সুনির্দিষ্ট করে ধরবার জন্য বিশেষজ্ঞরা ]ক্ষত-ঘাটতি মানচিত্র’ (লিজান ডেফিসিট ম্যাপিং) নামক এক প্রকৌশল ব্যবহার করেছেন। মস্তিষ্ক বিশেষ ধরণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আচরণ কীভাবে প্রভাবিত হয় তা জানা যায় এই প্রকৌশলে।
গবেষকরা বাঁ কিংবা ডান দিকের পুরোমস্তিষ্ক কিংবা পিছনের অংশে ক্ষতযুক্ত ২৪৭ জন রোগীকে নিয়ে পরীক্ষা করেন। তুলনার মানদণ্ড হিসেবে ৮১ জন সুস্থ বয়ঃপ্রাপ্ত মানুষকে রাখা হয়। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশের ক্ষতি হলে কী ঘটে তা প্রণালীবদ্ধভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে পারেন মস্তিষ্কের কোন কোন অংশ বোধবুদ্ধিগত পটুতার জন্য অপরিহার্য।
যুক্তিবিচারকে মাপবার জন্য গবেষকরা দুটি মৌলিক পরীক্ষা প্রণয়ন করেন। একটি হল বাচিক উপমাভিত্তিক যুক্তিবিচার। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন শব্দের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করতে বলা হয়। একটা প্রশ্ন এরকম: ‘রিনার বুদ্ধি যদি শাবানার চেয়ে বেশি হয়, আর রিনার বুদ্ধি যদি স্মিতার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে শাবানার বুদ্ধি কি স্মিতার চেয়ে বেশি?” এর উত্তর থেকে বোঝা যায়, একটি নির্দিষ্ট বিবৃতি থেকে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষমতা উত্তরদাতার কত।
দ্বিতীয়টা হল অ-বাচিক প্রশ্ন, যার সাহায্যে অবরোহী যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। বিভিন্ন গড়ন, ছবি কিংবা সংখ্যার মধ্যে ছাঁদ কিংবা সাদৃশ্য শনাক্ত করা এর অঙ্গ। নমুনা: “৫,৬,৭ কিংবা ৬,৫,৭-এর মধ্যে কোন সেটটির সঙ্গে ১,২,৩-এর মিল আছে?” দেখা গেল, পুরোমস্তিষ্কের ডান দিকের অংশে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরা দু ধরনের পরীক্ষাতেই অন্যান্য অংশে ক্ষতযুক্ত রোগীদের তুলনায় রীতিমতো খারাপ ফল করেছেন। অন্য অসুস্থদের তুলনায় এবং সুস্থ লোকেদের মানদণ্ডে এঁদের ভুল করার প্রবণতা ১৫% বেশি। প্রমাণিত হল যে ডান দিকের পুরোমস্তিষ্ক সত্যিই যুক্তিবিচারের জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে নতুন তথ্যর ব্যাখ্যা দেওয়া এবং যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য। মুখ্য গবেষক জোসেফ মোল (ইউসিএল কুইন্সস্কোয়ার ইন্সটিটিউটের স্নায়ুতত্ত্ব ও স্নায়ু-মনস্তত্ত্ব বিভাগ) জানিয়েছেন, পুরোমস্তিষ্কের ডান দিকটা মানুষকে কীভাবে চিন্তাভাবনা করতে ও সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে তা নিয়ে তাঁরা গবেষণা করছেন।
নতুন কিংবা অচেনা পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতাও আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরেকজন অগ্রণী গবেষক লিজা সিপ্লোত্তি বলেছেন, মস্তিষ্কে যুক্তিবিচার আর অচেনা পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান করার সংযোগ-জালিকাগুলি অনেক পরিমাণে একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। উভয়েই পুরোমস্তিষ্কের ডান দিকের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অধ্যাপক পারাশকেভ নাচেভ ও তাঁর সহযোগীদের উদ্ভাবিত অগ্রসর প্রকৌশল ব্যবহার করে তাঁরা পুরোমস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে যুক্তিবিচার ধাক্কা খায় তা নির্ণয় করতে পেরেছেন। ব্যবহারিক চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ভবিষ্যৎ উপযোগিতা অনেক। তবে এর জন্য এ-কে আরও অনেক দূর এগোতে হবে।