রক্তচাপের ওঠানামার সঙ্গে বোধ-বুদ্ধির হ্রাস যুক্ত থাকতে পারে

রক্তচাপের ওঠানামার সঙ্গে বোধ-বুদ্ধির হ্রাস যুক্ত থাকতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ জানুয়ারী, ২০২৫

রক্তচাপ উচ্চ হলে, হৃদপিণ্ড রক্ত ভালোভাবে পাম্প করতে পারে না। এতে বাম নিলয়ের দেওয়াল পুরু হতে থাকে, একে লেফট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রোফি বলে। সময়ের সাথে সাথে এতে হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কমে যাবে যার থেকে হার্ট ফেল হয়। উচ্চ রক্তচাপের আরও এক ঝুঁকির কথা আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ নিউরোলজির মেডিকেল জার্নাল নিউরোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের সমীক্ষা অনুসারে, সময়ের সাথে সাথে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপ ওঠানামা করলে, তাদের চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। এই অনুসন্ধান কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক স্থাপন করলেও শ্বেতাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক স্পষ্ট হয়নি। এই গবেষণায় রক্তচাপের পরিবর্তনশীলতা এবং বোধের সমস্যার মধ্যে কারণ ও ফলের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়নি। এখানে শুধুমাত্র পারস্পরিক সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয়েছে। শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটির এমডি আনিসা ধানা বলেছেন, গবেষণা জানাচ্ছে, রক্তচাপের ওঠানামায় উচ্চ রক্তচাপের নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বোধ-বুদ্ধির সমস্যার জন্য ঝুঁকির একটা কারণ হতে পারে। বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপ ও সময়ের সাথে সাথে যেকোনো পরিবর্তনের জন্য নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। গবেষক জানিয়েছেন, এতে এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়, যাদের বোধ-বুদ্ধির সমস্যা হতে পারে, তাহলে এটা উপশম করার জন্য কাজ করা যায়, যা বোধ-বুদ্ধির সমস্যা প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণায় ৪৭৭০ জন ব্যক্তি নেওয়া হয়েছিল, যাদের গড় বয়স ছিল, ৭১ বছর। এদের মধ্যে ৬৬% কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকারী ও বাকি অংশগ্রহণকারীরা শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের অধ্যয়নের শুরুতে রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারপরে প্রতি তিন বছরে গড়ে ১০ বছর রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার সাথে শুরুতে এবং শেষে চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তির পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, অংশগ্রহণকারীদের গড় রক্তচাপ ছিল ১৩৮/৭৮ মিমি পারদস্তম্ভ। ১৩০/৮০ মিমি পারদস্তম্ভ বা তার থেকে বেশি হলে, উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
গবেষণায় কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের সিস্টোলিক রক্তচাপ ( অর্থাৎ হৃদপিণ্ড যখন সংকুচিত হচ্ছে) গড়ে ১৬ মিমি পারদস্তম্ভ, আর শ্বেতাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের ১৬ মিমি পারদস্তম্ভ ছিল। সময়ের সাথে রক্তচাপের পরিবর্তনের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে বিভক্ত করা হয়েছিল। কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে যাদের রক্তচাপের ওঠানামা সবচেয়ে বেশি ছিল তাদের বোধ পরীক্ষায় সবচেয়ে কম স্কোর দেখা গেছে। অন্যদের তুলনায় তাদের স্কোরের পার্থক্য ২.৮ বছরের বৌদ্ধিক বার্ধক্যের সমতুল্য। অধ্যয়নের শুরু থেকে যারা রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের তারতম্য বোধ পরীক্ষায় স্কোরের কোনও পার্থক্য ছিল না। বার্ধক্যজনিত সমাজ, অ্যালজাইমার্স রোগের বিস্তারের ফলে, বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বোধের পতনকে ধীর করার জন্য প্রতিরোধের কৌশল চিহ্নিত করা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে বলে ধানা জানিয়েছেন। রক্তচাপ ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করলে এক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। তবে এই গবেষণার সীমাবদ্ধতা হল শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ, এই দুটি দলের অংশগ্রহণকারী বাছা হয়েছিল, ফলে তা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + thirteen =