
সামনের ১৩/১৪ মার্চ ঘটতে চলেছে এক দুর্লভ ঘটনা। ওইদিন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে। চাঁদের চেহারাটা লালচে হয়ে যাবে। কারণ পৃথিবীর আবহমণ্ডল থেকে নীল কিংবা অন্য হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যর আলো নানাদিকে ঠিকরে পড়বে, কিন্তু লাল আর কমলা প্রভৃতি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো চাঁদের ওপর গিয়ে পড়বে। চাঁদের এই পূর্ণগ্রাস শুরু হবে ১৩ মার্চ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সময়াঞ্চলের রাত ১১:২৬ মিনিটে (পূর্ব সময়াঞ্চলের ১৪ মার্চ রাত ১৪:২৬-এ)। এখানে পূর্ণগ্রাস স্থায়ী হবে মাত্র ঘণ্টাখানেক। ১৪ মার্চ দেখা যাবে উজ্জ্বল আলো এসে পুনরায় চাঁদকে আঘাত করছে: প্রশান্ত মহাসাগর সময়াঞ্চলের রাত/ভোর ৩:৩২ মিনিটে (পূর্ব সময়ঞ্চলের সময় রাত ০০ : ৩২ –এ)।
সূর্যগ্রহণ আর চন্দ্রগ্রহণ দুটো আলাদা জিনিস। সূর্যগ্রহণ তখনই হয় যখন অমাবস্যার দশায় চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে একেবারে পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যিখানে এসে পড়ে। তখন চাঁদের ছায়া পড়ে পৃথিবীর ওপর। আর চন্দ্রগ্রহণ তখনই হয় যখন পূর্ণিমার দশায় চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে এমন অবস্থানে চলে আসে যেখানে পৃথিবী এসে পড়ে একেবারে চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে, আর পৃথিবীর ছায়া গিয়ে পড়ে চাঁদের ওপর। পৃথিবীটা চন্দ্রের চেয়ে অনেক বড়ো। সূর্যগ্রহণ যখন হয় তখন ছোটো একটা ছায়া বড়ো একটা বস্তুর ওপর পড়ে, ফলে বড়ো বস্তুটার একটা অংশই কেবল ছায়ায় ঢাকা পড়ে। চন্দ্রগ্রহণের সময় কিন্তু ছোটো একটা বস্তু বিশাল একটা ছায়ার আওতায় গিয়ে পড়ে। ফলে ছোটো বস্তুটা পুরোপুরি ঢাকা তো পড়ে যায়ই, উপরন্তু পুরো ছায়াটার একপাশ থেকে অন্য পাশ পরিক্রমা করতে তার বেশি কিছুটা সময় লাগে। সেই কারণেই চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণের চেয়ে ঢের বেশিক্ষণ ধরে চলে, আর সেই কারণেই চন্দ্রগ্রহণকে অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করা চলে।
আমরা সচরাচর ধরে নিই, পূর্ণিমা বুঝি সারারাত্রিব্যাপী। আসলে কিন্তু ওটা একটা মুহূর্ত মাত্র – ঠিক যে-মুহূর্তে চাঁদ চলে আসে সূর্যের মুখোমুখি, আর আমরা চাঁদের দিবাবিভাগের অর্ধটা পুরোটা দেখতে পাই। মোটামুটি ওই মুহূর্তটাতেই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। ১৩/১৪ তারিখের এই গ্রহণটা চলার পুরো সময় জুড়ে পৃথিবীর যে-দিকটা চাঁদের দিকে মুখ করে থাকবে, তার মধ্যে পড়ছে উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকা। আফ্রিকার একেবারে পশ্চিম প্রান্তের কোনো কোনো জায়গা থেকে অস্তমুখী চাঁদের কিছু ঝলক দেখা যাবে। আর গ্রহণ-লাগা চাঁদের উদয় দেখা যাবে কোরিয়ার বদ্বীপ থেকে আর রাশিয়ার একেবারে পূর্বপ্রান্তের কোনো কোনো জায়গা থেকে। আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়া থেকে আংশিক গ্রহণ-লাগা চাঁদের উদয় আর অস্তর কিছু অংশ দেখা যাবে। পৃথিবীর ছায়া আকারে চাঁদের থেকে এত বড়ো বলেই চাঁদের পক্ষে ওই ছায়ার সবটা অতিক্রম করতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। তারপর চাঁদ আবার উপচ্ছায়া অঞ্চলে ফিরতে শুরু করে। তখন তার কিনারায় একটুখানি সূর্যালোক পড়লেও সেটা ঝিলিক দিতে থাকে। আর কালো রেখাটা চাঁদের বুক বেয়ে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। উপচ্ছায়ার মধ্যে পুরোপুরি ফিরে আসার পর চাঁদকে আমরা আবার স্বাভাবিক রূপেই দেখতে পাব। মোটের ওপর ১৪ তারিখ পূর্বাঞ্চলীয় রাত/ভোর ৪:৪৮ (প্রশান্ত মহাসাগর সময়াঞ্চলের রাত ১৩:৪৮-এ) গ্রহণ কার্যত শেষ। তবে তারপরও ৭৫ মিনিট চাঁদ থাকবে উপচ্ছায়া এলাকায়। তাই প্রকরণগত দিক থেকে একেবারে নির্ভুল হিসেব অনুযায়ী গ্রহণ তখনই শেষ হবে যখন চাঁদ পুরোপুরি প্রচ্ছায়া ছেড়ে বেরিয়ে যাবে।