রান্নাঘর থেকে আমরা বেশি বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছি

রান্নাঘর থেকে আমরা বেশি বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ মার্চ, ২০২৪

জ্বালানী, সারা বিশ্বে বায়ু দূষণের শুধুমাত্র বাহ্যিক উৎসই নয়, তা বাড়ির এক আভ্যন্তরীণ উৎসও। পারডু’স লাইলস স্কুল অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, গ্যাসের চুলায় রান্না করলে প্রচুর পরিমাণে ছোট ন্যানো পার্টিকেল তৈরি হয় যা আমাদের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে এবং জমা হতে থাকে। এই ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত ন্যানোপার্টিকল ১-৩ ন্যানোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট, ফলে এগুলো শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুদের বাড়ির গ্যাসের ওভেন থেকে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ৩ ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট কণার ন্যানোক্লাস্টার অ্যারোসোল কীভাবে বাড়ির ভিতরে বৃদ্ধি পায় এবং ছড়িয়ে পড়ে তা জানা যায়না, কারণ এত ছোটো হওয়াতে তা পরিমাপ করা খুব কঠিন। জার্মান কোম্পানি GRIMM AEROSOL TECHNIK দ্বারা প্রদত্ত অত্যাধুনিক বায়ুর গুণমান নির্ধারণের যন্ত্র ব্যবহার করে, পারডিউ গবেষকরা একটা ছোটো ল্যাবে বাড়ির গ্যাসওভেনের অনুকরণে রান্না করার সময় এই ক্ষুদ্র কণাগুলিকে পরিমাপ করতে সক্ষম হন৷
এই পরিবেশ তৈরি করে GRIMM AEROSOL-এর যন্ত্রের সাহায্যে, যা উচ্চ-রেজোলিউশন কণা আকার ম্যাগনিফায়ার-স্ক্যানিং মোবিলিটি পার্টিকেল সাইজার (PSMPS) এর সাহায্যে গবেষকরা বাস্তবসম্মত রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় ইনডোর ন্যানোক্লাস্টার অ্যারোসোল কণার উপর প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এই তথ্যের সাথে তারা, পরিচিত বহির্জগতের বায়ু দূষণের মাত্রার তুলনা করেন। বাহ্যিক দূষণ অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত এবং তার সম্পর্কে আগে থেকেই জানা আছে। গবেষকরা দেখেন, প্রতি কিলোগ্রাম রান্নার জ্বালানিতে ১০ কোয়াড্রিলিয়ন ন্যানোক্লাস্টার অ্যারোসোল কণা নির্গত হতে পারে। এই অ্যারোসল কণা যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে উত্পাদিত কণার সমান বা তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরা ব্যস্ত রাস্তার তুলনায়, বাড়িতেই ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি অ্যারোসল কণা শ্বাস নেয়ার সময় গ্রহণ করে। এই কণা বাড়ির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আর মানুষের শ্বসনতন্ত্রে জমা হয়। ১০ বিলিয়ন থেকে ১ ট্রিলিয়ন কণা একজন প্রাপ্তবয়স্কের মাথায়, শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের ট্র্যাকিওব্রঙ্কিয়াল অঞ্চলে জমা হতে পারে। আকারে ছোটো হওয়ার জন্য শিশুদের ক্ষেত্রে এই কণা জমার ঘনত্ব আরও বেশি হবে। গ্যাসের দহনের ফলে তৈরি হওয়া ন্যানোক্লাস্টার অ্যারোসোল মাখন, তেল বা গ্যাসের চুলায় রান্না করা থেকে শুরু করে বাতাসে প্রবেশ করা বড় কণার সাথে সহজেই মিশে যেতে পারে, ফলে নতুন কণা তৈরি হয়। এই ধরনের বায়ু দূষকের হাত থেকে বাঁচতে এক্সহস্ট ফ্যান বা চিমনি চালিয়ে রান্না করলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 6 =