রেকর্ডে রেকর্ড !

রেকর্ডে রেকর্ড !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জুলাই, ২০২৪
Olympic

পদক জেতা, রেকর্ড ভাঙা – পাখির চোখ, প্যারিসে অলিম্পিক। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক সবেমাত্র শুরু হয়েছে। কে কটা পদক আনে, তা নিয়ে উত্তেজনা, উন্মাদনা তো থাকেই। তবে কারোর ক্ষেত্রে স্বপ্ন থাকে, আরও এককদম এগিয়ে, রেকর্ড ভাঙার। নিজের রেকর্ড ভাঙো, ইতিহাসের রেকর্ড ভাঙো- বেশুমার স্বপ্ন, লাগাতার প্রচেষ্টা। কিন্তু পারফরম্যান্সের উন্নতি সত্ত্বেও রেকর্ড ভাঙা খুব কঠিন হয়ে উঠছে। তবে কী অ্যাথলিটদের রেকর্ড ভাঙার ক্ষমতার কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক সীমা আছে?

এর কারণ হতে পারে পেশির জান্তব ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা। অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীরা প্রায়শই তাদের মনোহর পেশি নিয়ে গর্ব করে। তবে সুন্দর পেশি হলেই তাতে অ্যাথলেটিসিজমের উন্নতি ঘটবে, এমনটা নাও হতে পারে। পেশি, আয়তনে যত বাড়তে থাকে, তার কার্যক্ষমতা তত কমে। পেশির আকার ছাড়াও, খেলোয়াড়ের পেশির ধরন, তাদের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক – স্প্রিন্টিংয়ের মতো কিছু খেলায় অতিরিক্ত পেশি, অনেকসময় খেলোয়াড়েরদের পারফরম্যান্সে হ্রাস টানতে পারে। দুটি মুখ্য ধরনের পেশি ফাইবার – ফাস্ট টুইচ আর স্লো টুইচ। ফাস্ট-টুইচ ফাইবারে শক্তির সঞ্চয় বেশি থাকে, তাড়াতাড়ি নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই ফাইবার দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই স্প্রিন্টারদের ক্ষেত্রে ফাস্ট-টুইচ ফাইবার অনেক বেশি থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে ম্যারাথন দৌড়বিদদের স্লো-টুইচ ফাইবার বেশি থাকে। ফলে তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে পারফরম্যান্স দিতে পারেন। এখন এদের কেউই বিপরীত দলে নাম লেখালে রের্কড ভাঙা তো দূর, আশানুরূপ পারফরমেন্স করতে পারবে না। অনেকসময় খেলোয়াড়েরা প্রায়শই ৪০০-মিটার স্প্রিন্টের মতো খেলায় নিজেদের রেকর্ড ছাপিয়ে যায়। কিন্তু এরাই শারীরিক ক্ষমতার এমন সর্বচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় যে নিজের রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেও ইতিহাসের রেকর্ড ভাঙতে পারে না।

খেলোয়াড়েরদের সর্বোচ্চ সীমা, পেশি দ্বারা নির্ধারিত হলেও তারা তাদের পেশিগুলো কীভাবে ব্যবহার করে তার উপরও তাদের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। এটারও একটা উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক- ১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে, ডিক ফসবারি, হাই জাম্পে একটি উদ্ভাবনী কৌশল ব্যবহার করেছিলেন যা আক্ষরিকভাবে তার এই সর্বোচ্চ সীমাটিকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। জাম্পের সময়, পোলটির উপর দিয়ে সোজা লাফানোর পরিবর্তে, তিনি তার শরীরকে মাঝপথে ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। পাঁচ বছর পরে, ডোয়াইট স্টোনস, “ফসবারি ফ্লপ” নামের এই পদ্ধতি পুনরায় ব্যবহার করে হাই-জাম্পে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। তবে আজও খেলোয়াড়রা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চলেছে – রেকর্ড ভাঙার আশায়।

উদ্ভাবনী কৌশল এবং ক্রীড়া-সামগ্রীর উন্নতি, ভবিষ্যতে খেলোয়াড়দের আরও ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, উন্নত স্পোর্টসওয়্যার। খেলার পোশাক, উল্লেখযোগ্যভাবে পারফরম্যান্স বা কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে। পলিউরেথেন-কোটেড সাঁতারের পোশাক – ২০০৮ সালের অলিম্পিকে, সাঁতারুদের ২৫টি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছিল। গবেষকদের অনুমান, এই পোশাকে অল্প পরিমাণে হাওয়া আটকায়, সেটাই সাহায্য করে প্রতিযোগীদের। ২০১০ সালে পলিউরেথেন সাঁতারের পোশাক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। যেহেতু খেলোয়াড়রা রেসগুলো এক সেকেন্ডের একশোভাগেরও কয়েক ভাগের ব্যবধানে জেতে, তাই কয়েক মিলিমিটারের প্লবতা, সিদ্ধান্তমূলক হতে পারে। যদিও তাতে যে রেকর্ড ভাঙা যায়নি তা নয়। তাহলে কি আমরা ধরে নেবো সাঁতারুরা এখনও সেরা পারফরম্যান্সের সীমায় পৌঁছতে পারেনি !

এছাড়াও খাবার, মানসিক অবস্থা এবং প্রশিক্ষণের পদ্ধতি, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের উন্নতি, বেশিরভাগ ট্রায়াল এবং এরর-এর মাধ্যমে দেখা হয়। কিন্তু মুখ্যত সেই উন্নতি কী কারণে ঘটে, সে বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে।